বেড়েই চলছে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা
- শহিদুল ইসলাম রাজী
- ০৪ মে ২০২০, ০৯:১১
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ন্যূনতম সুরক্ষাসামগ্রী নিয়েই সামনের সারিতে দেশের পুলিশ বাহিনী। লকডাউন নিশ্চিত করা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন, ত্রাণ বিতরণসহ এই দুর্যোগে নানা কাজে পুলিশকে পাশে পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা তাদেরকেও গ্রাস করেছে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে সম্মুখযোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বার্থেই সুরক্ষিত করতে হবে তাদের। তবে পুলিশ সদর দফতর বলছে, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি মনোবল অটুট রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ রোববারের তথ্য অনুযায়ী দেশজুড়ে ৮৫৪ জন পুলিশ সদস্যের দেহে কোভিড-১৯ এর নমুনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও অন্তত ১১৩ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর। এ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৫৪ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ জন ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত। পুলিশ সদরদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ছিলেন পুলিশের ৭৪১ জন সদস্য। করোনায় মোট আক্রান্তের মধ্যে ৪৪৯ জন ডিএমপিতে কর্মরত। এছাড়া করোনার লক্ষণ থাকায় সারা দেশে ৩১৫ পুলিশ সদস্য আইসোলেশনে রয়েছেন। তাদের সংস্পর্শে আসায় আরও ১,২৫০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংকটের প্রথম থেকেই বিদেশফেরতদের অবস্থান শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠানো, ঘরে থাকা নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত থেকে শুরু করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশ সদস্যদের সরাসরি জনসাধারণ এবং আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে নিজেদের মধ্যেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে সম্মুখযোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশের আক্রান্ত পাঁচ কর্মকর্তা ও সদস্য মারা গেছেন। তারা হলেন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে উপপরিদর্শক (এসআই) সুলতানুল আরেফিন (৪৪), বিশেষ শাখার (এসবি) এসআই নাজির উদ্দীন (৫৫), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো: আব্দুল খালেক (৩৬), কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০), ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো: আশেক মাহমুদ (৪৩)। এদের মধ্যে সর্বশেষ গত শনিবার সকালে উপপরিদর্শক (এসআই) সুলতানুল আরেফিন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
করোনায় পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো করছেন কনস্টেবলরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কিংবা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার কাজে সরাসরি কনস্টেবলরাই যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় তাদের নিজেদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কনস্টেবলদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দরকার।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, করোনাভাইরাসের বিষয়ে শুরু থেকেই পুলিশ সদস্যদেরকে সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আক্রান্তদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে মানুষকে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রথমত তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত সেসব সচেতনতার বার্তার বিষয়ে সদস্যদের আপডেট করা হচ্ছে। এছাড়া সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত পুলিশ লাইনসে গিয়ে সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভসসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পুলিশ লাইনস এবং ব্যারাকগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীতে পুলিশ আক্রান্তের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ডিএমপিতে ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ঢাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আক্রান্তের হার বেশি। এ কারণে ডিএমপিতে পুলিশের মধ্যেও আক্রান্তের হার বেশি।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক সদস্যকে সুরক্ষাসামগ্রী দিয়েছি। তাদের বসবাসের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের সচেতন করা হচ্ছে। তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতোমধ্যে আমাদের বেশকিছু সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং পাঁচজন গর্বিত সদস্য দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের জন্য গর্বিত। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা তাদের এই ত্যাগকে, এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন এবং মনোবলের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পুলিশ নিজেদের সুরক্ষার চেয়ে জনগণের সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে পুলিশের এত বেশি সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশের ডিউটির ধরনটাই এ রকম যে মানুষের সংস্পর্শে না এসে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেন এআইজি মিডিয়া।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা যেন সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা পান, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক শক্তি যেন অটুট থাকে সে জন্য ঊর্ধ্বতনরা খোঁজখবর রাখছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা