১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ শাবান ১৪৪৬
`

সংসারের হাল ধরা হলো না দরিদ্র কলেজছাত্র আদমের

- ছবি : বাসস

সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের কলেজছাত্র আবুল বাসার আদমের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটি চাকরি করার এবং দরিদ্র মা-বাবার সংসারের হাল ধরার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

আবুল বাসার আদম (১৮) আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের দিনমজুর নুর হাকিম ঘরামি (৫৯) ও শাহানারা বেগম (৫০) দম্পতির ছেলে এবং প্রতাপনগর এপিএস ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বড় ভাই চঞ্চল ঘরামি (২৫) একটি প্লাস্টিক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন, মেজ ভাই বেলাল ঘোরামি (২০) মাছের ঘেরে কাজ করেন, আর ছোট বোন সুফিয়া খাতুন (১৫) স্থানীয় কল্যাণপুর মৌজাদাল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

আনন্দ মিছিলই শেষ যাত্রা
আদমের ছোট বোন সুফিয়া খাতুন জানান, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে তার ভাই আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। কিন্তু কেউই ভাবতে পারেননি যে এই মিছিলই তার জীবনের শেষ যাত্রা হয়ে উঠবে। প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মিছিল লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালায়। ওই সময় একটি গুলি আদমের মাথার বাম পাশে আঘাত করে, ফলে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে আমাদের দরিদ্র পরিবারের হাল ধরা। কিন্তু ভাগ্য তাকে সে সুযোগ দিল না। এখন আমাদের পরিবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।’

স্বপ্নভঙ্গ
আদমের বড় ভাই চঞ্চল ঘরামি বলেন, ‘আমি, আমার বাবা আর মেজ ভাই বেলাল দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে ছোট ভাই আদমের লেখাপড়ার খরচ চালাতাম। আমরা আশা করেছিলাম, সে একদিন ভালো চাকরি করে পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করবে। কিন্তু সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ায় আমাদের সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আদম আর নেই।’

সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ এবং সরকারের পক্ষ থেকে আরো পাঁচ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছি।’

মায়ের পথ চাওয়া
আদমের মা শাহানারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি এখনো পথ চেয়ে বসে থাকি, আমার আদম ফিরে আসবে। সে যেন এখনো আমাকে ‘মা, মা’ বলে ডাকছে। আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না যে আমার ছেলে আর নেই।’ তিনি সরকারের কাছে তার পরিবারের হাল ধরে রাখার জন্য একমাত্র মেয়ে সুফিয়ার একটি চাকরির আবেদন জানান।

হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
আদমের বাবা নুর হাকিম ঘরামি বলেন, ‘আমি আর আমার দুই ছেলে দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চালাই। অনেক কষ্টে ছোট ছেলে আদম আর মেয়ে সুফিয়াকে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম, যাতে ওরা আমাদের দুঃখ ঘোচাতে পারে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার ছোট ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
শবে বরাতের মহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার খাগড়াছড়িতে কারারক্ষীদের আন্দোলনে জেলার অবরুদ্ধ এখন থেকে ৯৯৯-এর সেবা পাওয়া যাবে ইংরেজিতেও প্রধান উপদেষ্টার সাথে আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষককে দুদকে তলব শাহবাগে আবারো প্রাথমিক শিক্ষকদের অবরোধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ী হত্যায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড খুলনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার ৩ বছরের কারাদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম আকাশছোঁয়া উত্থান দিয়ে সপ্তাহ শেষ হলো পুঁজিবাজারে হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভারতকে দেয়া হয়েছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সকল