০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ রমজানের বাবার অশ্রুসিক্ত চোখে

- ছবি : বাসস

রমজান, বয়স ২৪। মা-বাবার প্রথম সন্তান। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের নন্দীপুর গ্রামে। এসএসসি পাশের পর হাল ধরতে বাধ্য হন সংসারের। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। জীবিকার জন্যে চলে গিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। কাজ করতেন আকিজ গ্রুপের সেলসম্যান হিসেবে। রামপুরায় আত্মীয়ের বাসায় খরচ ভাগাভাগি করে থাকতেন। কৃষক বাবার এই সন্তান চাকরি করে যা আয় করতেন নিজের খরচের টাকা রেখে বাকি টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন মা-বাবা এবং ছোট ভাইয়ের জন্যে। দুই ভাই, এক বোন আর মা-বাবা নিয়ে ছোট্ট সুখের নীড় ছিল তাদের।

ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে বোন। মায়ের ইচ্ছে ছিল এ বছর ডিসেম্বরে ছেলে রমজানের বিয়ে দেবেন। ঘরে তুলবেন নতুন বউ। রমজানের বৃদ্ধ দাদির স্বপ্ন ছিল নাতবউ দেখার। বাড়ির সামনে রমজানের কবর। সারাক্ষণ চেয়ে থাকেন নাতির কবরের দিকে। কত ছেলে আসে রমজানের কবর দেখতে, কিন্তু প্রিয় নাতিকে তিনি আর দেখতে পারবেন না সেই আফসোসে অনবরত চোখের জল ফেলেন।

রমজানের একমাত্র ছোট ভাই শাহিন। নিজে পড়াশোনা চালিয়ে না গেলেও ছোট ভাই যেন পড়াশোনা করতে পারে রমজানের সে খেয়াল ছিল সবসময়। ছোট ভাইকে ভর্তি করিয়ে দেন নেত্রকোনার একটি কারিগরি কলেজে।

একমাত্র ছোট ভাই শাহিনকে ফোন করে আন্দোলনে না গিয়ে বাড়িতে মা-বাবার পাশে থাকতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯ জুলাই নিজেই নেমে আসলেন রাজপথে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি যোগ দেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। রামপুরায় তখন ছাত্র-জনতার বিপ্লবী শ্লোগানে উত্তপ্ত রাজপথ। রমজান যোগ দিলেন রামপুরার ওয়াপদা রোডের ছাত্র-জনতার মিছিলে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালালো। রমজান গুলিবিদ্ধ হলেন। রাজপথে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গলার ঠিক নিচ দিয়ে রমজানের ফুসফুস ভেদ করে চলে যায় গুলি। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। ছাত্র-জনতা রক্তাক্ত রমজানকে ধরাধরি করে নিয়ে যায় রামপুরার ওয়াপদা রোডের বেটার লাইফ হসপিটালে। সেখানে শুরুতে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যখন সহযোদ্ধারা মোবাইল ফোনে ভিডিও করা শুরু করেন তখন কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রমজান। ওই দিনই তার লাশ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি নন্দীপুরে।

বাড়ির সামনে ফসলের মাঠ। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় সবুজ ধানক্ষেতের পাশে নারকেল গাছের ছায়ায় দাফন করা হয় শহীদ রমজানকে।

সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শহীদ রমজানের বাবা লিটন মিয়া ও মা মোছাম্মত মনোয়ারা। লিটন মিয়া পেশায় কৃষক। সামান্য জমি যা আছে তাতে কৃষিকাজ করে কোনো রকম সংসার চালান তিনি। মা মনোয়ারা গৃহিণী এবং সময় পেলে বেত, বাঁশের তৈরি পণ্য বানান এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কিছু অর্থ আয় করে সংসারে ব্যয় করেন।

শহীদ রমজানের বাবা জানান, রমজানের পরিবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে দু’লাখ টাকা, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা, উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে ৪৮ হাজার টাকা, জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা, বিএনপি নেতা ডাক্তার আনোয়ারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছে।

রমজান পড়াশোনা করেছেন বাড়ির পাশের নন্দীপুর সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে ছোট্ট একটি মোড়। রমজানের বন্ধুরা এবং গ্রামবাসী মিলে সে মোড়ের নাম দিয়েছে ‘শহীদ রমজান মোড়’।

শহীদ রমজান মোড়ে দাঁড়িয়ে রমজানের বাবা তার সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেন। এলাকাবাসী শহীদ রমজানের স্মরণে তার বিদ্যালয়ের মাঠটিকে একটি মিনি স্টেডিয়াম করার দাবি জানায়।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

শহীদ রমজানের বাবা লিটন মিয়া একজন গর্বিত বাবা। একজন শহীদের বাবা হিসেবে তিনি গর্ববোধ করেন বলে জানিয়েছেন। তার সন্তান দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন তার সন্তানের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। মদনপুরের নন্দিপুর গ্রামে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় সোনালি ধানক্ষেতের পাশে নারিকেল গাছের ছায়ায় শায়িত আছেন শহীদ রমজান।

এ সময়ে শহীদ সন্তানের কবরে হাত বুলিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে রমজানের বাবা নতুন বাংলাদেশ দেখার প্রবল আগ্রহ ব্যক্ত করেন। সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
সমালোচনা আর চাপের মুখে সরকারের সামনে যে ৬ চ্যালেঞ্জ সন্তানহারা চিকিৎসক দম্পত্তি প্রতিষ্ঠা করলেন ক্যানসার ফাউন্ডেশন তিস্তা এখন উত্তরাঞ্চলের কান্না : দুলু রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ গাজীপুরে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতায় শহীদ যারা’ স্মারকের মোড়ক উন্মোচন রাজনীতিতে ফের সক্রিয় সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজান সিনহা গণহত্যার বিচারের পর নির্বাচন দিতে হবে : রফিকুল ইসলাম খান হিজাব শুধু অধিকার নয়, এটি সভ্যতার উপাদানও বটে : জাবি ভিসি ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত বিজয়ের ব্যত্যয় জাতির জন্য আত্মহত্যার শামিল : অ্যাডভোকেট জুবায়ের প্রতি বছর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ ফেনী যুবদলের নেতৃত্বে নাসির-বরাত

সকল