২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

উপায় না পেয়ে স্বজনদের আশ্রয়ে আছে শহিদ মিজানের পরিবার

- ছবি : বাসস

রাজধানীর নর্দা এলাকায় ওমেনস ওয়ার্ল্ড নামে একটি কোম্পানিতে পার্লারের মেডিসিন তৈরির কাজ করতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে শহীদ মো: মিজানুর রহমান।

তিনি গত ২১ জুলাই বিকেলে আজিজ সড়কের সামনে আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মিজানুর রহমানের মৃত্যুর পর খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে তার পরিবার। স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪২) দু’সন্তান নিয়ে বর্তমানে চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকায় বোনের বাসায় আছেন।

শহীদ মিজানের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদি দক্ষিণ ইউনিয়নের পিংড়া গ্রামের তপাদার বাড়ি। মিজানুর রহমান (৪৮) ওই গ্রামের মরহুম মো: খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি নিজ গ্রামের পিংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং হজরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। পরে অর্থের অভাবে আর সামনে এগুতে পারেননি।

সম্প্রতি সরেজমিনে মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদি দক্ষিণ ইউনিয়নের পিংড়া তপাদার বাড়িতে স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই বাড়ির বাসিন্দা আব্দুল গফুর তপাদার জানান, শহীদ মিজানুর রহমানের পাঁচ ভাই ও চার বোন। বর্তমানে তিন ভাই জীবিত আছেন। সবার বড় সোলেমান তপাদার (৭৮) বাড়ি থাকেন, তিনি কৃষি কাজ করেন। আরেক ভাই সিরাজুল ইসলাম (৬২)। তিনি অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। তিনি সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। আরেক ভাই মোখলেছুর রহমান (৫২) ঢাকার মিরপুরে চা দোকান দিয়ে সংসার চালান। আরেক ভাই সুলতান তপাদার ৮২ সালে মৃত্যুবরণ করছেন। চার বোন হলেন শামসুন্নাহার (৮২), সালেহা বেগম (৬৬), শাহানারা বেগম (৪৫), হোসনেয়ারা বেগম (৪২)।

মিজানের চাচাত ভাই মো: হাবিবুর রহমান জানান, মিজানুর রহমান খুবই নিরিবিলি স্বভাবের লোক ছিলেন। তবে ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে বাড়ির লোকদের খোঁজখবর নিতেন। তিনি শহীদ হওয়ার পরে এলাকার লোকজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে ওই সময় দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি সহযোগিতা দরকার। কারণ তাদের তো আর কোনো উপার্জনের পথ নেই।

মিজানুর রহমানের বড় ভাই সুলেমান তপাদার বলেন, ‘আমার ভাইটি খুব অমায়িক ও বন্ধুবৎসল ছিল। সে বাড়িতে এলে সবার সাথে মিশতো। তার মৃত্যুর পরে মিজানুর রহমান এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্ত্রী রেখে গেছেন। তার বসতঘরটির অবস্থা খুবই নাজুক। অনেকটা বসবাসের অযোগ্য। যে কারণে তার স্ত্রী ও দু’সন্তান বোনের বাসায় থাকে চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকায়। অন্যের সহযোগিতায় কতদিন তাদের চলবে? আমরা চাই সরকার এই পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’

শহীদ মিজানুর রহমানের আরেক বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় একটি ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পাই আমার ভাই নর্দায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর শুনে আমি দ্রুত সময়ে উত্তরা থেকে চলে আসি বারিধারা জেনারেল হাসপাতালে। এসে দেখি আমার ভাই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আমি তাদের সাথে কথা বলে মৃত্যু সনদ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ভাইয়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি। পরের দিন সকালে বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমার ভাইয়ের পরিবারটি এখন খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো উচিত। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

শহীদ মিজানের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম বলেন, ২১ জুলাই সন্ধ্যায় আমার স্বামীর কোম্পানির এক লোক তার মৃত্যুর সংবাদ জানায়। তখন আমরা বাড়িতে। শুনলাম আসরের নামাজের পর তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। সেখান থেকে তাকে নর্দা-বারিধারা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মারা যান।

তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন পর্যন্ত খুবই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকা এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে লোক মারফতে ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছি। আর দাফন ও মিলাদের জন্য কর্মস্থল ওমেন্স ওয়ার্ল্ড-এর থেকে সামান্য কিছু টাকা সহায়তা করা হয়েছে। আমার ছেলে রবিউল আলম পিয়াস (১৮) চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে এবং মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৬) আমাদের গ্রাম এলাকার শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো উপায় না পেয়ে ছেলের পড়ালেখার সুবিধার্থে বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। আমার মা-বাবা মারা গেছে আরো অনেক আগে। ভাইরা ছোটখাটো ব্যবসা ও কাজ করে নিজেদের সংসার চালায়। তারাও আমাকে সহযোগিতা করার মতো অবস্থায় নেই। তবে বর্তমানে ছেলের পড়ার জন্য বোন তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছে।

ঝর্ণা বেগম বলেন, স্বামীর শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়। সংসার চালানোর কোনো ধরনের উপায় নেই। সরকার যদি আমার ছেলেকে একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের কোনো রকম গতি হবে। আমি সরকারের কাছে বাড়িতে একটি বসতঘর নির্মাণ ও সন্তানের জন্য কর্মসংস্থানের দাবি জানাচ্ছি।

শহীদ মিজানুর রহমানের ছেলে রবিউল আলম (পিয়াস) বলেন, ‘বাবা ঢাকায় থাকলেও সব সময় আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি মৃত্যুর আগেও ওই দিন সকালে আমাকে ফোন দিয়েছেন। বাবা বলেছেন, বাড়ির বাজার করে দিতে। এরপর আর কথা হয়নি। আমি আগামী বছরে এইএসসি পরীক্ষা দেবো বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। পড়াশোনা চালানো এখন খুব কষ্ট হচ্ছে আর্থিক সমস্যার কারণে। আমাদের পরিবারের এমন পরিস্থিতিতে আমাকেই কাজে যোগ দিতে হবে। আমি চাই সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক। আর আমরা আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।’

শহীদ মিজানুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার বলেন, ‘বাবাকে আর কখনো ফিরে পাবো না। বারবারই বাবার সাথে আমার অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে। যখনই কোনো বিষয়ে আবদার করেছি বাবা তা পূরণ করেছেন। বাবার সাথে আমি বলতাম বড় হলে ডাক্তার হবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন মনে হয় স্বপ্নই রয়ে যাবে। কেউ সহায়তা না করলে আমার এ স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়বে। অনেকদিন হয় আর বাবার ফোন আসে না। বাবাকে খুব মিস করি আমি। আমার বাবার কী অপরাধ ছিল যে তাকে গুলি করলো? আমরা সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার চাই। আমাদের ভরণপোষণের জন্য আর্থিক সহযোগিতা এবং আমার ভাইয়ের জন্যে একটা চাকরি চাই।’

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
সিলেটে ৪৩৬ বস্তা চিনিসহ আটক ৩ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মশিউর কারাগারে রাবিতে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সিলেটের অপেক্ষা বাড়িয়ে খুলনার বড় জয় বেরোবিতে পরীক্ষা না দিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী পাসের ঘটনায় সেই শিক্ষককে অব্যাহতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করল সুইজারল্যান্ড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারো ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষের বহিষ্কার দাবি প্রধান উপদেষ্টার সাথে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মহাসচিবের সাক্ষাৎ পাকিস্তান-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প নেই : হাইকমিশনার

সকল