শরীরে বুলেট নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ইমরান ইবনে আমির
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৯, আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৭
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। তাদের রুখতে গিয়ে তছনছ হয়েছে বহু পরিবার। যন্ত্রণায় কাটছে হাজারো জীবন। তাদেরই একজন কক্সবাজারের ইমরান ইবনে আমির।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। তার ডান ও বাম হাত, মাথা এবং শরীর বুলেটবিদ্ধ। কক্সবাজার শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিবে কয়েকটি বুলেট বের করলেও অপারেশনের জন্য শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় আরো সাতটি বুলেট নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ইমরান ইবনে আমির (১৬)।
বুলেটবিদ্ধ ইমরান ইবনে আমির কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদরাসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তিনি কক্সবাজার শহরের বাহারছাড়া এলাকার মোহাম্মদ আমির হোসেন (৫৪) ও রাবেয়া বেগম (৪৮) দম্পতির সন্তান এবং মহেশখালী পুটিবিলা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ।
সরেজমিনে কথা বলার জন্যে ইমরান ইবনে আমিরের বাসার দরজায় নক করতেই এক যুবক দরজা খুলে দেন। তিনি নিজেকে ইমরানের বড় ভাই আবু রায়হান পরিচয় দিয়ে বাড়ির একটি রুমে নিয়ে যান। দেখা যায়, রুমের এক পাশে খাটের মধ্যে শুয়ে আছেন ইমরান ইবনে আমির। একটু পরপর যন্ত্রণায় ওহ-আহ শব্দ করছেন। বড় ভাই রায়হান পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। রুমের দরজার পাশে পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো মা রাবেয়া বেগমের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
ইমরান ইবনে আমির জানান, তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল নিয়ে ইমরান ইবনে আমিরও লিংক রোড থেকে কক্সবাজার শহরের পেট্রোল পাম্প এলাকায় পৌঁছার সাথে সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় অন্য সহকর্মীদের সাথে তিনিও বুলেটবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে সহকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ইমরান ইবনে আমিরকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং পুলিশের ভয়ে স্বজনরা ইমরান ইবনে আমিরকে গোপনে বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিবে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেন। ডাক্তার ইমরান ইবনে আমিরের শরীরে ১৫টি বুলেট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অপারেশনের মাধ্যমে আটটি বুলেট বের করা সম্ভব হয়। আবার অপারেশন করার মতো শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় আরো সাতটি বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। গোপনে বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে যায় ইমরান ইবনে আমির।
আমিরের বড় ভাই আবু রায়হান বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে শরীরে থাকা গুলির যন্ত্রণায় দিনরাত ছটফট করছেন তার ভাই। তীব্র যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। ছোট ভাইয়ের এ অবস্থা তিনি আর দেখতে পারছেন না। চোখের সামনে যন্ত্রণায় কাতরালেও তিনি কিছুই করতে পারছেন না।
তিনি জানান, সরকারিভাবে এ পর্যন্ত একবারের জন্যও ইমরান ইবনে আমিরের কোনো খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি।
ইমরান ইবনে আমিরের চিকিৎসক ডাক্তার রাকেশ কুমার ধর বলেন, শরীরে যেসব বুলেট রয়ে গেছে তা বের করা সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। এ উন্নত চিকিৎসা করাতে গেলে লাগবে অনেক টাকা।
ইমরান ইবনে আমিরের বাবা আমির হোসেন বলেন, ছেলেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে সবসময় উৎসাহ দিয়েছি। আমার ছেলের শরীর বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছে।
আমির হোসেন বলেন, দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে যেন আর কোন বৈষম্য না থাকে এটাই আমার চাওয়া। পাশাপাশি ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি সহযোগিতারও দাবি জানান আমির হোসেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে সবাইকে সহযোগিতা দেয়া হবে। এছাড়াও কক্সবাজারে নিহতদের পাশাপাশি ইতোমধ্যে আহত ২৪ জনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।
সূত্র : বাসস