২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সবাইকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস - ছবি - ইন্টারনেট

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সবাইকে শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিন উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে এ সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।

এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বড়দিনের বাণীতে বলেন, ‘খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিষ্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।’

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা।’

প্রধান উপদেষ্টা বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঞ্চালনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে গতকাল অনুষ্ঠিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খ্রিষ্টান ধর্মের নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, দ্যা ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অফ বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলীপ পি অধিকারী, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্লাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান মহাজোটের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নির্মল ডি’ কস্তা এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উদারতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং খ্রিষ্ট্রান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্ট্রান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে অন্তর্বর্তী সরকার আড়াই কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এজন্য সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী চার্চগুলোতে এ অনুদান বণ্টন হয়েছে বলে জানান তারা। এসময় বড়দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি বাইবেল উপহার দেন নেতৃবৃন্দ।

বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের দিনে আপনাদের সাথে দেখা হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমরা ধর্মীয় সংহতি চাই। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ এই শব্দগুলো আমরা চাই না। এদেশে আমরা সবাই এক পরিবার, সবাই মিলে একত্রে থাকব- এটা আমাদের স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবার এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষ একই। আমাদের মানুষ পরিচয় আগে, তারপর ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মে শান্তির বাণী আছে। সেই শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। তাহলেই বিভেদ দূর হবে। নিজ নিজ ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মনের মধ্যে স্থাপন করা গেলে অন্য ধর্মের মধ্যেও তা খুঁজে পাবেন। তখন আর অন্য ধর্মের সাথে বিভেদ হবে না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সুন্দর শৈশব পাবে।’

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement