০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা সম্ভব নয়

মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা সম্ভব নয় - সংগৃহীত

ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর হামলার প্রতিবাদে আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিন মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর মুসলমানদের ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার না থাকা। যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার থাকত তবে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করত।

শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ‘মহান নেতা ইসমাঈল হানিয়া, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও ইয়াহিয়া ইবরাহীম হাসান আস সিনওয়ারসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের শাহাদাত ও গাজা-ফিলিস্তিনকেন্দ্রিক প্রতিরোধ অক্ষের অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন- ইরানের আল মুস্তফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শওকাত হোসেন, ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক জামাল উদ্দিন বারী।

সভায় শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী বলেন, ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে যায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের জনসাধারণের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তাদের ভূখণ্ড জবরদখল করে যাচ্ছে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রথমে মিশর ও জর্ডান এবং এরপর আরব বিশ্বের দেশগুলো ইসরাইলমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেখানে আরব বিশ্ব মাত্র কয়েক দিনে পরাজিত হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা মাসের পর মাস তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পাশে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হাউসি, ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে। আর ইরান সরাসরি ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের মাধ্যমে ইসরাইলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। এসব আক্রমণে ইসরাইলের সামরিক শক্তি ও তাদের তথাকথিত শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্সের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মোকাবেলায় ইসরাইলের অর্থনীতিতে চরম ধস নেমেছে। প্রবৃদ্ধির হার নিম্নগামী হয়ে পড়েছে। সামরিক ব্যয় মেটাতে তাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে ইহুদিরা ইসরাইল ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাসের আগে আরব বিশ্বের পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছিল যে কতিপয় আরব দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু অক্টোবর মাসের যুদ্ধ সব হিসাব-নিকাশকে বদলে দেয়। আরব দেশগুলো নিজেদের পরিকল্পনা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়।

তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর মুসলমানদের ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার না থাকা। যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার থাকত তবে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করত। তিনি ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, ইরানে বিপ্লব হওয়ার কারণেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর।

অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে যে সঙ্কট বিরাজ করছে তা মোকাবেলায় মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই। মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই কেবল দানবীয় আগ্রাসনকে প্রতিহত করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ন্যাটোর ন্যায় মুসলিম দেশগুলোর একটি সামরিক জোট গঠন করা এখন সময়ের দাবি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অর্থনৈতিক জোট গঠন করে মুসলিম দেশগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। তিনি সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক সম্মিলিত হতে উদাত্ত আহ্বান জানান।

আলোচনা সভার শুরুতেই ফিলিস্তিনের উপর এক প্রামাণ্যচিত্র দেখোনো হয় এবং সভা শেষে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে তা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে শেষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement