০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বিদ্যুৎখাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার

- ছবি - ইন্টারনেট

বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে সরকারি কিছু সূত্র।

বর্তমানে এ পদক্ষেপটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করার জন্য আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।’

চলতি সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিপিডিবির এই কর্মকর্তা।

তিনি আরো বলেন, আগের মতো এবারো সরকারি-বেসরকারি খাতের ২৫-২৭টি ব্যাংক বন্ড ইস্যু প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে।

স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানো এবং দেশের বিদ্যুৎখাতকে স্থিতিশীল করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তাদের মতে, বিপিডিবি এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগের সাথে আলোচনা করতে পরামর্শ দিয়েছে।

বিপিডিবির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) হিসেবে পরিচিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা বিপিডিবির কাছ থেকে কত টাকা পাবে আমরা হিসাব করছি।’

তিনি আরো জানান, বর্তমানে বিপিডিবির মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বেসরকারি উৎপাদনকারীদের পাওনা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।

বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল ১৭ হাজার কোটি টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকা।

আদানি গ্রুপসহ ভারতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় আট হাজার কোটি টাকা পাবে।

এর আগে বিদ্যুৎখাতকে স্থিতিশীল করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা পেয়েছিল। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া দায় পরিশোধের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিল সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

বিদ্যুৎখাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ২৫ জানুয়ারি একটি চুক্তি সই হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সরকার সিটি ব্যাংককে ১৯ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা এবং পূবালী ব্যাংককে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করে।

ভর্তুকি তহবিল বিতরণে সরকারের অক্ষমতার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে কেউ কেউ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

এ সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেপো রেট অনুযায়ী, আট শতাংশ কুপন হারে বিশেষ বন্ড ইস্যু চালু করা হয়। ভবিষ্যতে রেপো রেটে যেকোনো পরিবর্তন হলে সে অনুযায়ী বন্ডের সুদের হার সমন্বয় করবে।

বন্ডের মেয়াদ শেষে সরকার সুদসহ ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে বন্ডগুলো পুনরুদ্ধার করবে। সাধারণত বন্ডগুলো ১৫-২০ বছর মেয়াদি হলেও বিদ্যুৎখাতের জরুরি চাহিদা মেটাতে এই বিশেষ বন্ডগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর।

সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, বারাকা, কুশিয়ারা, ডরিন ও অ্যাক্রন পাওয়ারসহ বিদ্যুৎখাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগের সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম।

অর্থ বিভাগ ব্র্যাক ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়াসহ অন্যান্য ব্যাংকের সাথে পর্যায়ক্রমে চুক্তির পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেছে।

চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আশাবাদী।

ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এসব বন্ড পেতে পারে, একইসাথে সরকারও আর্থিক দিক দিয়ে কঠিন সময় মোকাবিলা করতে পারে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement