২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

হাসপাতালের চিত্র বলতে গিয়ে কান্নায় আপ্লুত মুশফিকুল ফজল আনসারী

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের হাসপাতালের চিকিৎসারত অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কান্নায় আপ্লুত হয়ে উঠেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, আজকে এখানকার পরিবেশ খুবই বেদনা বিধুর। খুবই কঠিন মুহূর্ত যখন পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তারা তাদের জীবন দিয়েছে। এই সামান্য উপঢৌকন তাদের পরিবারের জন্য কিছু না।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষে 'স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমান করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন ‘লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’।

জাতীয় প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার বিষয়ক সংগঠন 'জার্নালিস্ট ফর জাস্টিস' এর সহযোগিতা করে। অর্থ সহযোগিতা হিসেবে ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী, ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়, গাজীপুর ভিত্তিক দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাংবাদিক শাকিল হোসেন, দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি আবু তাহের মো: তুরাব এবং দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভোমিকের পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেয়া হয়। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ।

হাসাপাতালের চিকিৎসারত চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনসারী। তিনি বলেন, আপনারা হয়তো এখানে বসে অনেক কথা বলছেন, অনেকের মনে সুপ্ত বাসনা পূরণ করতে চেষ্টায় আছেন। আমি গতকাল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখে চোখের পানি ধরা রাখা যায় না। হাত, পা নেই, অঙ্গহানি ও পঙ্গু হয়েছে অনেক ছাত্র-জনতা। দুই পা নেই, কেটে ফেলতে হয়েছে, ওপর হয়ে শুয়ে আছে। উল্টে উঠে একটি হাসি দিয়ে বলল, ‘ব্রাদার উই আর মেরিট’। কী ভালবাসা আর দেশ নিয়ে, কী প্রেম তাদের দেশের প্রতি।

‘প্রত্যেক শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে যারা কাতরাচ্ছেন তাদেরকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে, দেশের জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন তার পরিবার আবার টাকা দিয়ে চিকিৎসা ওষুধ কিনবে, এটা মেনে নেয়া হবে না।’

নিহত গাজীপুর ভিত্তিক দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাংবাদিক শাকিল হোসেনের বাবা বলেন, আমার ছেলের লাশ দিতে চায়নি, পরে দেয়, কিন্তু জানাজার জন্য সময় দিতে চায়নি। পরে জনগণের চাপে সময় দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা তার ছেলের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আপনাদের মতো আমার ছেলেও সাংবাদিক ছিল। আমার ছেলে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। আমি যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যার বিচার চেয়ে মামলা আটক করে পুলিশ, সেখান থেকে কোর্টে মামলা করেছি, কিন্ত পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেনি।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতিও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এত কম সময়ে, এত জীবন দান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচারের সময় প্রতি মাসে ২৫-৩০ জন করে সাংবাদিক নির্যাতন ও নিগৃহের শিকার হয়েছেন।

সাংবাদিক নেতা ও কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, সবার জন্য সব কিছু আছে বা হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য কেউ কিছু করে না, করেনি। সাংবাদিকদের অন্য চোখে দেখত সরকার। কত সাংবাদিক নিহত ও খুন হয়েছে, সাগর-রুনি হত্যার মামলা নিয়ে কী করেছে সরকার এটি একটি উদাহরণ। স্বাধীনতার পর মুজিবের ফ্যাকিসিজমের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার আত্মীয়রা ফুলে ফুপে উঠছিল। কত লাঞ্ছনা, বঞ্চনার মধ্যে পড়েছিল এই জাতি, খাদ্যে ভরপুর থাকলেও না খেয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। অথচ কোনো সরকার সেই মুজিবের আমল নিয়ে কথা বলেনি।

সব জায়গায় গিজ গিজ করছে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্তর্বতী সরকারের উচিৎ কঠিন হয়ে, প্রতি বিপ্লবের ষড়যন্ত্রকারীদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, একটানা এক মাস ৫ দিনের আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের সাথে শতশত শহীদের সাথে আমাদের পাঁচজন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। সাংবাদিকরা আন্দোলন করতে যায়নি, গিয়েছিলেন শুধু আন্দোলনের খবর সংগ্রহে জন্য। তারাও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এই শহীদ সাংবাদিকদের পরিবারের জন্য কী আর করত পারবো? তবে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কিছু নেই আমাদের কাছে। তবে একটি দাবি করছি, প্রত্যেক শহীদদের নামে যারা যে এলাকায় শহীদ হয়েছেন তাদের নামে রাস্তা ও স্মৃতিফলক স্থাপন করতে হবে। যেন স্বৈরাচারের চিহ্ন হয়ে থাকে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে, একটি স্বৈরাচার কিভাবে টিকে ছিল জোর করে। আর যেন কেউ স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা না করে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, প্রেসক্লাবের সাধারণ আইয়ুব ভূঁইয়া, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাছির জামাল প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement
আ. লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই : মেজর হাফিজ ফেনী কলেজে যোগ দিলেন মাউশির সেই পরিচালক ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত ফরিদপুরে প্রথম স্বামীর হাতে খুন হলো দ্বিতীয় স্বামী আ.লীগের ছয় নেতার জামিন, আদালতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করেছিল ইসরাইল! বড় প্রকল্পে বরাদ্দের টাকা যেন শতভাগ সদ্ব্যবহার করা হয় : সাখাওয়াত হোসেন জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : বুলবুল ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ শহীদের পরিবারকে জামায়াতের অর্থ সহায়তা এবারের জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন যেসব কারণে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ

সকল