গাজার পথে ৪০০ টন ত্রাণ, যথেষ্ট নয় বলছেন মানবতাবাদীরা
- ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২, আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২০
গাজার অনাহার সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির মধ্যে, শনিবার তিনটি জাহাজের আরো একটি বহর, সাইপ্রাসের একটি বন্দর থেকে ৪০০ টন খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন চ্যারিটি জানিয়েছে, দুটি জাহাজ এবং একটি বার্জের মাধ্যমে সরবরাহ করা চাল, পাস্তা, ময়দা, ডাল, টিনজাত সবজি এবং প্রোটিনের মতো সাহায্য সামগ্রীগুলোতে ১০ লাখের বেশি ইউনিট (১০ লাখ মিল) খাবার প্রস্তুত করা যাবে।
এছাড়া ঐতিহ্যগতভাবে পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিনের রোজা ভাঙার জন্য এই চালানে খেজুর রয়েছে। জাহাজগুলো কবে গাজায় পৌঁছাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ মাসের শুরুতে, প্রথম চালানে একটি জাহাজে করে ২০০ টন খাবার, পানি ও অন্যান্য সহায়তা পাঠানো হয়েছিল।
চলতি মাসের শুরুতেই গাজার বিধ্বস্ত ও বিচ্ছিন্ন উত্তরাঞ্চলে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে জাতিসঙ্ঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো সতর্ক করেছিল।
মানবিক সহায়তা কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল সমুদ্র ও আকাশপথে ত্রান সরবরাহ যথেষ্ট নয়। সড়কপথে আরো বেশি ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার। জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ আদালত ইসরাইলকে আরো স্থলপথ খুলে দেয়ার জন্য বলেছে। আর এই সঙ্কট মোকাবেলায় অন্যান্য ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানার আল-ক্বাহেরা টেলিভিশন জানিয়েছে, রোববার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। এই টেলিভিশনের সাথে মিসরের গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫০ জন পণবন্দী হওয়ার পর শুরু হওয়া যুদ্ধে, মাত্র এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি স্থাপন সম্ভব হয়। শনিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি কিছু ইসরাইলি নাগরিক হতাশা প্রকাশ করে এবং তার প্রতি পদত্যাগের আহ্বান জানায়।
অন্যদিকে বন্দীদের পরিবারগুলো ইসরাইল জুড়ে রাস্তায় নেমে আসার শপথ গ্রহণ করেছে।
বন্দী ওহাদ বেন আমির স্ত্রী রাজ বেন আমি বলেন, ‘আলোচনাকারী দলগুলোকে যথাযথভাবে চুক্তি করতে বলুন, চুক্তি ছাড়া যেন তারা ফিরে না আসে। আমাদের প্রিয়জনদের যেন তারা ফিরিয়ে আনে।’
প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও বাড়িঘরের পাশাপাশি রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক গ্রিডসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।
মুওয়াসির উপকূলে স্থাপিত তাঁবু শিবিরে মায়েদের আশঙ্কা, তাদের সন্তানরা যুদ্ধপূর্ব সময়ের কিছুই আর মনে করতে পারবে না। তাদের ছবিতে ফুল বা সুন্দর কিছুর বদলে কেবল ফুটে উঠছে ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান। এমন কথা বলেছেন ও্যাফা আবু সামারা নামে একজন মা।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে চলা এ যুদ্ধে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭০৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জনের লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিহতদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা