২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রফিক হারিরি হত্যায় হিজবুল্লাহ সদস্য জড়িত বলে রায় ঘোষণা

- ছবি : সংগৃহীত

লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে ২০০৫ সালে বৈরুতে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে একজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত আন্তর্জাতিক আদালত।

চারজন অভিযুক্তের মধ্যে সালিম আয়াশকে হারিরির হত্যায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ সমর্থিত একটি আন্তর্জাতিক আদালতে রফিক হারিরির হত্যার ব্যাপারে রায় দিতে গিয়ে এক বিচারক বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নেতারা জড়িত ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিচারক আরো বলেছেন, ১৫ বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডে সিরিয়ান সরকার সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল সেরকম প্রমাণও নেই।

চারজন অভিযুক্ত ছিলেন সালিম জামিল আয়াশ, হাসান হাবিব মেরহি, হুসেইন হাসান ওনেইসি এবং আসাদ হাসান সাবরা।

বৈরুতে হারিরির যানবহরের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, সেসময় লেবাননে সিরিয়ার ব্যাপক প্রভাবকে হারিরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন।

হারিরির গাড়িবহর যখন বৈরুতের সমুদ্রের সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একটি ভ্যান ভর্তি বিস্ফোরক দিয়ে ওই বহরে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ২২০ জন আহত হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন রফিক হারিরি এবং আরও ২১জন।

১৫ বছর আগে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে হত্যার দায়ে, নেদারল্যান্ডসে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত যে চার ব্যক্তিকে বিচার কাঠগড়ায় তোলা হয়, তারা লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নিচু পর্যায়ের সদস্য।

সন্দেহভাজনদের বিচার হয়েছে তাদের অনুপস্থিতিতে।

২০০৫ সালের ওই বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এই চার ব্যক্তি অস্বীকার করেছিল। সিরিয়া সরকারও তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

বৈরুতে এই হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিরিয়া প্রায় ৩০ বছর পর লেবানন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

এই হত্যাকাণ্ড ছিল লেবাননের জন্য একটা মোড়-ঘোরানো মুহূর্ত। কারণ ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর যে প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের উত্থান হয়, তা পরবর্তী বছরগুলোতে লেবাননের রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

ওই ঘটনার পর যে সিরিয়া-বিরোধী, এবং পশ্চিমাপন্থী দলটি আত্মপ্রকাশ করে, তার নেতৃত্ব দেন হারিরির ছেলে, সাদ হারিরি। তিনি তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

দ্য হেগ শহরের উপকণ্ঠে যে গ্রামে এই মামলার বিচার কাজ চলছে, মঙ্গলবার সেখানে রায় দানের সময় এই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনি নিজেও যোগও দেন।

চারজন অভিযুক্ত সালিম জামিল আয়াশ, হাসান হাবিব মেরহি, হুসেইন হাসান ওনেইসি এবং আসাদ হাসান সাবরা এখন কোথায় আছেন তা অজ্ঞাত।

আদালত তাদের পক্ষ সমর্থনের জন্য যে আইনজীবীদের নিয়োগ করেন তারা কৌঁসুলিদের দায়ের করা মামলা নাকচ করে দেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে এই মামলা দাঁড় করানো হয়েছে ঘটনাভিত্তিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে এবং সেসব তাদের সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণ করে না।

মামলার বিষয়বস্তু
২০০৫ সালের সকালবেলা, রফিক হারিরি যখন এক যানবহর নিয়ে বৈরুতের সেন্ট জর্জ হোটেলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একটি ভ্যানে লুকানো একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।

বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তায় প্রকাণ্ড একটা গর্ত তৈরি হয়। নিকটবর্তী যানবাহনে আগুন ধরে যায় এবং এলাকার বহু দোকানের সামনের অংশ উড়ে যায় এবং আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

হারিরি ছিলেন লেবাননের অন্যতম সবচেয়ে বিশিষ্ট সুন্নী রাজনীতিক। তার মৃত্যুর সময়ে তিনি সিরিয়াকে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবার আহ্বানে সমর্থন জানাচ্ছিলেন। লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর ১৯৭৬ সাল থেকে সেখানে সিরিয়ার সৈন্যরা ছিল।

তার হত্যার পর হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সিরিয়াপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। লেবাননের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী সিরিয়ার দিকে হারিরির হত্যার জন্য অভিযোগের আঙুল তোলা হয়।

সরকার দু সপ্তাহ পর পদত্যাগ করে এবং এপ্রিল মাসে সিরিয়া লেবানন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর জাতিসংঘ এবং লেবাননের সরকার ২০০৭ সালে এই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই বিচারের লক্ষ্য ছিল ওই বোমা হামলার তদন্ত এবং চারজন সন্দেহভাজনকে তদন্ত শেষে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ষড়যন্ত্র সহ তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়।

পঞ্চম সন্দেহভাজন ছিলেন হিজবুল্লাহর সামরিক অধিনায়ক মুস্তাফা আমিন বদর-এদ্দীন। ২০১৬ সালে সিরিয়ায় তিনি নিহত হবার পর তার নাম অভিযোগ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।

হিজবুল্লাহ সমর্থকরা এই মামলা প্রথম থেকেই প্রত্যাখান করে আসছিলেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে এই বিচার রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়।

সঙ্কটময় লেবানন
বিবিসি নিউজের পল অ্যাডামস বৈরুত থেকে এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে আততায়ীর হাতে নিহত হারিরির হত্যার ঘটনার এই বিচারের রায়ের ১৫ বছর পর কী তাৎপর্য রয়েছে।

তিনি বলছেন, মাত্র দু'সপ্তাহ আগে বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটি এই মুহূর্তে বিপর্যস্ত। বিস্ফোরণের ঘটনার বাহ্যিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ব্যাপকতা এখন দেশটিতে অন্য সব কিছুকেই অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

এছাড়াও করোনাভাইরাস লকাডাউনে দেশটির অবস্থা সঙ্গীন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে এবং মানুষ উদ্বিগ্ন।

এর ওপর রয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক দুরাবস্থা। গত বছরের শেষ থেকে দেশটিতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হয়েছে। মুদ্রার মূল্য পতন হয়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে ব্যাপকভাবে এবং অনেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

বৈরুতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্র বলে দিচ্ছে কীভাবে বিত্তশালী ও স্বচ্ছল লেবানীজরা প্রতিদিন দেশ ত্যাগ করছে।

১৫ বছর আগে রফিক হারিরি যে লেবাননে আততায়ীর হামলায় নিহত হয়েছিলেন তার সাথে আজকের লেবাননের অনেক তফাত রয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী দেশ ত্যাগ করেছে অনেকদিন আগে। হিজবুল্লাহ এখন আগের থেকে অনেক শক্তিশালী, অনেক বড়। রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামরিক জীবনের সব স্তরে তাদের এখন উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।

গোষ্ঠীটির বিরোধীরা হয়ত মনে করতে পারে যে ২০০৫ এবং ২০২০র বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর হাত ছিল, কিন্তু লেবাননে তাদের উপস্থিতি আজ এতটাই শক্তিশালী যে খুব কম মানুষই মনে করছে এই ট্রাইব্যুনালের রায় সেখানে কোনরকম প্রভাব ফেলবে।

যে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে রফিক হারিরির মৃত্যুর জন্য অনেকে দায়ী করে থাকে, সেই হারিরির কনিষ্ঠ পুত্র সাদ হিজবুল্লাহর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করেছেন।

তিনি হিজবুল্লাহর সাথে জোট গঠন করে ইতোমধ্যেই দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাহলে আবার তার জন্য হিজবুল্লাহর সমর্থন প্রয়োজন হবে। বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল