গাজায় হামলার হুমকি নেতানিয়াহুর
- রয়টার্স
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫১
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটিতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। রাশিয়া সফর শেষে দেশে ফেরার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এ হুমকি দেন।
রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগেই গাজায় হামলার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ইসরায়েলের ‘যুদ্ধবাজ’ এ প্রধানমন্ত্রী। ফেরার পর তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় এ হামলা হতে পারে’। পর্যবেকেরা নেতানিয়াহুর এই ঘোষণাকে নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলবাদী ইহুদিদের ভোট বাগিয়ে নেয়ার ‘অপকৌশল’ হিসেবে দেখছেন। কেবল গাজায় হামলার ঘোষণাই নয়, নেতানিয়াহু ক’দিন আগে এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পশ্চিম তীরের জর্দান উপত্যকা নিজেদের দখলে নেবেন।
তার ওই ঘোষণায় আরব বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশ এবং রাশিয়াও। এ পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যকে আরো সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেবে বলে শঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ দিন ধরে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে আসছে। গাজা থেকে রকেট ছোড়ার অজুহাত তুলে তারা নানা সময় বিমান হামলা চালিয়ে থাকে সেখানে। এরপরও সীমান্তে প্রতি শুক্রবার ফিলিস্তিনিরা দখলদার দেশটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন। সেখানেও নিয়মিতভাবে হামলা চালানো হয়। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতানিয়াহুর এ হুমকির গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।
পশ্চিম তীর দখলের ঘোষণার নিন্দায় ইউরোপ
এ দিকে আনাদোলু জানায়, ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পশ্চিম তীরের জর্দান উপত্যকা দখলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নতুন ঘোষণায় এবার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপের নেতৃস্থানীয় পাঁচ দেশ। বৃহস্পতিবার ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেন ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে পশ্চিম তীর দখল ‘আন্তর্জাতিক আইনের ঘোরতর লঙ্ঘন হবে’ বলে ইসরাইলের প্রতি হুঁশিয়ারি জানানো হয়। এতে বলা হয়, পশ্চিম তীর, বিশেষ করে জর্দান উপত্যকা ও উত্তরাংশের মৃত সাগর (ডেড সি) উপকূল দখলে নেতানিয়াহুর ঘোষণায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেন। ‘এটি কার্যকর হলে, তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের ঘোরতর এক লঙ্ঘন। এর ফলে ১৯৬৭ সালের চুক্তি অনুসারে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়টি হুমকির মুখে পড়বে এবং এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা আরো কঠিন হয়ে যাবে।’ বিবৃতিতে সম্প্রতি ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে রকেট হামলার ঘটনারও নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরাইলের অধিকারের ব্যাপারে আমরা সচেতন এবং সম্প্রতি গাজা থেকে সেখানে রকেট হামলারও নিন্দা জানাই।
১৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের পুনর্নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক টেলিভিশন বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, পুনরায় ক্ষমতায় এলে তার সরকার পশ্চিম তীরের ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। এ প্রতিশ্রুতিকে নির্বাচনী ‘ভাঁওতাবাজি’ হিসেবে অভিহিত করছে নেতানিয়াহুর বিরোধীরা।
এ দিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় ফিলিস্তিন, জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব বিশ্বের দেশগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাশিয়াও নেতানিয়াহুর এ ঘোষণার বিরোধিতা করে। এটি এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াবে বলে হুঁশিয়ারি জানায় তারা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে নেতানিয়াহুর সাক্ষাতের আগে আগে রাশিয়ার দিক থেকে এ মন্তব্য আসে। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এ ইস্যুতে নীরব রয়েছে।