আরব বসন্তের পথ দেখাতে পারে সিরীয় বিপ্লব
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৩৯, আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৫২
বিশ্ব এখন তীব্র গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আরবরা আছে এর প্রাণকেন্দ্রে। নানাদিক থেকেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে আরব বিশ্বে। তাই একটি প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। আরব বিশ্ব আর কতকাল এমন এক নায়কতন্ত্রে স্থিতিশীল থাকবে।
আরব বিশ্বকে এক দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির জন্য চড়ামূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে তারা পশ্চিমা দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের উপর এমন এক শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, যাতে জনগণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শক্তিশালী দখলদার শক্তিও তাদের সাথে এতটা কাঠিন্য প্রদর্শন করেনি। ফলে তারা অসহায় অবস্থায় নিপতিত হয়েছে।
অপরদিকে ইরানে ঘটেছে শিয়া মতাদর্শের উত্থান। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের আদর্শিক বিকাশ নিশ্চিত করেছে। তবে আরবদের চরম পর্যায়ের ব্যর্থতা হলো, বাশারের সিদায়ানা কারাগারের বিভৎসতা প্রকাশের আগ পর্যন্ত তাদের অনেকেই ইরানি আদর্শে প্রভাবিত ছিল। এর বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেনি।
এদিকে, তুর্কি জাতীয়তাবাদী ধারণাও নিজ গতিতে এগিয়ে চলেছে। অনেকে তাতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতও হয়ে রয়েছে। কিন্তু আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। বরং অনেকে তো আরব জাতিয়তাবাদ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহীই নন। সেজন্য জাতীয়তাবাদের ধারণা মুখ থুবড়ে পড়ার পরও কি আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ে কথা বলা সম্ভব? এই বিষয়ে এখনই ঠিক বলা যাচ্ছে না।
আরব বিশ্বে এখন ইরানি আধিপত্যের অবসান ঘটেছে। যারা আগে ইরানে প্রভাবিত ছিল, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। আর এতোদিন জড়িত থাকার বৈধতা প্রমাণের প্রয়াস পাচ্ছে। ইরান বাশার প্রসাশনের পতনে কেবল সিরিয়াকেই হারায়নি। বরং সিরিয়ার বাইরে আফ্রিকা পর্যন্ত তার প্রভাব বৃদ্ধির পথও সংকুচিত করেছে। তারা সিরিয়ায় এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিল যে সেখানে মিম্বর থেকেও সাহাবীদের গালমন্দ করা হতো। আর এই অপরাধকে ঢাকার জন্য তারা দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সুসংহত করার বুলি আওড়াতো।
এক্ষেত্রে তারা ফিলিস্তিনি ইস্যু থেকেও সুযোগ গ্রহণ করেছে। কারণ, ফিলিস্তিন হলো আরবদের দুর্বলতার জায়গা। যেই ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে, আরবরা তাকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। এতে তার অন্য অপরাধগুলোও ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু কথা হলো, ফিলিস্তিনি পক্ষে কথা বলার অজুহাতে বাশার যখন দেড় মিলিয়ন সিরীয় মুসলিমকে হত্যা করল, তখন তাদের ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার স্বার্থকতা আর কী থাকে? কিন্তু কেবল ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণেই চাপা পড়ে গেছে যে জায়নবাদ যত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে, তার চেয়ে বেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বাশার সরকার।
মূলত ফিলিস্তিনি ইস্যুর অজুহাতেই আরববিশ্বে অনুপ্রবেশের সুযোগ পেয়েছে ইরান। তবে এখন তার মিথ্যা আখ্যানের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সেজন্য ইরানকে আর ফিলিস্তিনের পাশে দেখা যাবে না। তাদেরকে দখলদার শক্তির সামনেই ছেড়ে চলে যাবে।
মূলত আরব বসন্তকে সিরিয়ায় প্রতিরোধ করে ইরান। আমরা নাসরুল্লার আলোচনায় বসন্তকে স্বাগত জানাতে দেখেছি। কিন্তু তা যখন সিরিয়ায় গিয়ে আছড়ে পড়ে, তখন দেখতে পেলাম, তিনি তার বাহিনীকে সংগঠিত করে বসন্তের গতি রোধ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরান সিরিয়ায় পূর্ণমাত্রায় অনুপ্রবেশের সুযোগ পায়। এরপর সেখানে শুরু করে দেয় তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন। যার মধ্যে সাহাবী বিদ্বেষ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সিরিয়ায় বিপ্লবীরা যখন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে এলো, সেখানে নতুনভাবে আরব বসন্তের হাওয়া বইবার সুযোগ তৈরি হলো। ফলে ইরানে প্রভাবিত হয়ে যে আরব শাসকরা বসন্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারা এখন লোকসানের মুখে পড়বে। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার মতো কেউ থাকবে না।
বাইরে থেকে তো মনে হচ্ছে যে সংগঠনগুলো স্থির। তাদের ভাঙা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা বাইরে যেমন, ভেতরেও কি তেমন শক্তিশালী। আমাদের আশঙ্কা, সংগঠনগুলো তার লক্ষ্যের পথে অবিচল থাকতে পারবে না। তাহলে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন কোন পথে হবে? সিরিয়ার আন্দোলন হয়েছে জনগণের হৃদয় জয় করে। সেজন্য এই বিপ্লবের ছোঁয়া আরব মানচিত্রের শেষ বিন্দু পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে। এখন দেখা যাক, আরবরা তাদের স্বপ্ন পূরণে পুনরায় জেগে ওঠবে নাকি উদীয়মান তুর্কি জাতীয়তাবাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করবে?
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আবু সাঈদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা