১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরাইল হত্যা করেছে

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খুঁজছিল ইসরাইল - ছবি : বিবিসি

ইসরাইল গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনওয়ারকে খুঁজছিল। হামাসের নেতা, যিনি ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। সিনওয়ার হত্যার বিস্তারিত তথ্য এখনো আসছে, এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে যা যা জানা যাচ্ছে তা তুলে ধরা হলো।

রুটিন টহল
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, তাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি ইউনিট বুধবার রাফা অঞ্চলের তাল আল-সুলতান এলাকায় টহল দিচ্ছিল। তারা তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি চিহ্নিত করে এবং তাদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সবাই নিহত হয়। ওই সময় সংঘর্ষটি বিশেষ কিছু মনে হয়নি। সৈন্যরা বৃহস্পতিবার সকালের আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ফিরেও যায়নি।

বৃহস্পতিবার যখন লাশ পরীক্ষা করা হচ্ছিল, তখন একজনের সাথে হামাসের নেতার অদ্ভুত ধরনের মিল লক্ষ্য করা যায়। তবে আত্মঘাতী কোনো ফাঁদ থাকার ঝুঁকি বিবেচনায় দেহটি সেখানে রেখেই দেয়া হয়েছিল। এর পরিবর্তে একটি আঙুলের অংশ কেটে নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য ইসরাইলে পাঠানো হয়। পরে তার দেহ বের করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, তার বাহিনী জানতো না তিনি সেখানে ছিলেন। কিন্তু আমরা কাজ চালিয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, তার সৈন্যরা তিনজন পুরুষকে বাড়ি বাড়ি ছুটতে দেখেছিল। তারা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই তাদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যিনি পরে সিনওয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তিনি একাই একটি ভবনে দৌড়ে গিয়েছিলেন। তাকে সেখানে ড্রোনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়।

তার সাথে এতটা ছোট একটা দলের উপস্থিতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে হয়, তিনি সবার দৃষ্টির অগোচরে চলাফেরার চেষ্টা করছিলেন অথবা যারা তার সুরক্ষার জন্য ছিল তাদের বেশিরভাগ মানুষকে তিনি হারিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিনওয়ার হত্যার শেষ মুহূর্তগুলো ইসরাইলের প্রকাশ করা ড্রোনের ফুটেজে দেখা গেছে। ড্রোনটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের দ্বিতীয় তলার খোলা জানালা দিয়ে উড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরে কিছুদূর গিয়ে থেমে যায়। সেখানে মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা একজন ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে পড়ে থাকা একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়। সোফাগুলোও ধুলায় ধূসর বর্ণ ধারণ করেছিল। ড্রোনের কারণেও কিছুটা ধুলা উড়ছিল।

মুখমণ্ডল ঢাকা যে ব্যক্তিকে সিনওয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, তাকে দেখে আহত মনে হচ্ছিল। তার হাতে লাঠির মতো একটা কিছু দেখা যায় যেটা তিনি ড্রোনের দিকে ছুড়ে মারেন। এরপর ভিডিওটি শেষ হয়।

সিনওয়ারকে হত্যা
ইসরাইল বৃহস্পতিবার প্রথমে ঘোষণা করে যে সিনওয়ার স্থানীয় সময় বিকেলবেলায় গাজায় নিহত হয়েছে কিনা ওই সম্ভাবনার তদন্ত করছে।

এই ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে একজন পুরুষের লাশের ছবি দেখা যায় সাথে হামাসের নেতার সাথে খুব মিল রয়েছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল এবং ছবিটি এতটা ভয়াবহ যে তা প্রকাশের উপযোগী না।

তবে কর্মকর্তারা সে সময় সতর্ক করেন যে নিহত তিনজনের মধ্যে কারো পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এরপর খুব বেশি সময় না যেতেই ইসরাইলি সূত্রগুলি বিবিসিকে জানায়, তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে ওই বিষয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। যদিও তারা বলেছিল যে মৃত্যু নিশ্চিত করার আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষাগুলো করতে দীর্ঘ সময় লাগেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরাইল সিনওয়ারকে হত্যা করার তথ্য নিশ্চিত করে।

কঠিন চাপ অব্যাহত
ইয়াহিয়া সিনওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযানের ভিত্তিতে নিহত না হলেও আইডিএফ জানাচ্ছে, তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সেসব এলাকায় কাজ করেছে যেখানে তিনি থাকতে পারেন।

ইসরাইলি বাহিনী সিনওয়ারকে দক্ষিণের শহর রাফায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে এবং ধীরে ধীরে তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।

সিনওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিয়ে ছিলেন। তিনি সন্দেহাতীতভাবে ইসরাইলি চাপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন। বিশেষত যখন মোহাম্মদ দেইফ ও ইসমাইল হানিয়ের মতো অন্য হামাস নেতাদের হত্যা এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনার জন্য যে অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল।

একটি বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ‘দক্ষিণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমাদের অভিযান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গতিপথ সীমিত করে ফেলেছিল যেহেতু তাকে তাড়া করা হচ্ছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু শেষ নয়
সিনওয়ারকে হত্যা করা ইসরাইলের একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা থেকে যেটির শুরু, তবে তার মৃত্যুতে গাজার যুদ্ধ শেষ হবে না।

শুক্রবার হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নায়েম এক বিবৃতিতে বলেন, মনে হচ্ছে ইসরাইল বিশ্বাস করে আমাদের নেতাকে হত্যা করলেই আমাদের আন্দোলন কিংবা ফিলিস্তিনের মানুষের সংগ্রাম থেমে যাবে। কিন্তু সেটি শেষ করা যাবে না।

সিনওয়ারের নাম উল্লেখ কিংবা কিংবা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না করে নায়েম বলেন, প্রিয়জন হারানোটা খুবই বেদনাদায়ক।

নেতানিয়াহু বলছেন যে তিনি প্রতিশোধ নিয়েছেন। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলছেন যে হামাসের হাতে বন্দি কমপক্ষে ১০১ বন্দীর জীবন রক্ষার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রিয় বন্দি পরিবারগুলোর জন্য আমি বলছি, এটি যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা সকলের, আমাদের প্রিয়জনদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ শক্তিতে লড়াই চালিয়ে যাব।

ইসরাইলে বন্দিদের পরিবারগুলো বলছে যে তারা আশা করছে একটা যুদ্ধবিরতিতে এখন পৌঁছানো যাবে। যেন বন্দিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা যায়। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement