০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১,
`

লেবাননের রাজধানীতে ইসরাইলের ব্যাপক বিমান হামলা, সীমান্তে লড়াই অব্যাহত

দক্ষিণ বৈরুতের শহরতলী দাহিয়েহতে গভীর রাতে বিমান হামলার দৃশ্য। ফটো : ৪ অক্টোবর, ২০২৪ - ছবি : ভয়েস অব আমেরিকা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলায় গোটা এলাকা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। এই সর্বশেষ হামলার লক্ষ্যবস্তু কে ছিল, বা হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষনিক জানা যায়নি।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ অ্যাজেন্সি জানায়, ‘পর পর ১০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণগুলোর অন্যতম।’

বৈরুতে এবং শহরের বাহিরে সংবাদ সংস্থা এএফপির সংবাদদাতারা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পায়, যার ফলে দালান-কোঠা কেঁপে উঠে।

এএফপির এক সূত্র জানায়, ‘ইসরাইল দক্ষিণ শহরতলীতে পর পর ১১ বার হামলা করেছে।’

এর আগে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দিনে ইসরাইলি হামলায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৫১ জন আহত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ আর ইসরাইলের দাবি
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে যে, তারা লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০ হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে।

ইসরাইল বলেছে, তাদের হামলায় ১৫ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষনিক এই দাবি নিশ্চিত করেনি।

হিজবুল্লাহ জানায়, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে মারুন এল-রাস গ্রামে ইসরাইলি বাহিনী প্রবেশ করলে একটি বোমা বিস্ফোরিত করে।

হিজবুল্লাহ আরো জানায়, বিস্ফোরণে কয়েকজন ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে। দুই পক্ষের দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার আরো জানায়, তারা একজন সিনিয়র হিজবুল্লাহ সদস্য, মোহাম্মাদ আনিসিকে হত্যা করেছে।

সেনাবাহিনী বলে, বৈরুতে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা শাখা লক্ষ্য করে হামলায় আনিসি মারা যান।

এ পর্যন্ত ইসরাইলি এবং হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে লড়াই সীমান্তের একটি সরু এলাকায় সীমাবদ্ধ আছে। তবে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরাইল কয়েক ডজন গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যেতে বলেছে। ইসরাইল তাদেরকে সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে, লিটানি নদীর আরো উত্তরে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।

জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাব
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ১৭০১ অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের লিটানি নদীর উত্তর পাশে সরে যাওয়ার কথা ছিল। এই রেজোলিউশনের মাধ্যমে ২০০৬ সালে ইসরাইলের সাথে হিজবুল্লাহর যুদ্ধের অবসান হয়।

লেবাননের সেনা বাহিনী এবং জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সীমান্ত এলাকা টহল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা হিজবুল্লাহকে রেজোলিউশনের শর্ত মানতে বাধ্য করতে পারেনি।

ইসরাইল বলছে, হিজবুল্লাহ রেজোলিউশন লঙ্ঘন করে সীমন্তের কাছে শহর এবং গ্রামে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।

লেবানন বলেছে, ইসরাইল জাতিসঙ্ঘ রেজোলিউশনের অন্যান্য অংশ লঙ্ঘন করেছে।

ইসরাইল বলছে গত বছর ৮ অক্টোবরের পর থেকে রকেট হামলা শুরু হবার পর তারা হিজবুল্লাহকে হামলা করছে। রকেট হামলার কারণে উত্তর ইসরাইলের ৬০ হাজার বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছে।

ইসরাইলের পাল্টা হামলার ফলে লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাস্তচ্যুত হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইল বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং সিনিয়র হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের হত্যা করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক বছরে লেবাননে প্রায় ২ হাজার নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছে।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement