ইসরাইলের হামলায় ১০ লাখের বেশি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা লেবাননে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১২
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, ‘ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলার কারণে দেশজুড়ে ১০ লাখের মতো মানুষ ইতোমধ্যেই ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়ে থাকতে পারে।‘
নাজিব মিকাতি বলেন, ‘এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা।‘
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘বৈরুতে হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার দুই দিন পর রোববারেও বিমান হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হেজবুল্লাহও ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে আরো রকেট ছুঁড়েছে।‘
ওদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হাউছিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ‘বড় ধরনের‘ বিমান হামলা চালিয়েছে।
রোববার হেজবুল্লাহ তাদের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আলী কারাকি এবং একজন সিনিয়র ধর্মীয় নেতা শেখ নাবিল কাউক ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর চীফ অফ স্টাফ হারজি হালেভি বলেন, ‘হেজবুল্লাহকে আমাদের কঠিনভাবে আঘাত করা দরকার।‘
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, বিমান হামলার কারণে বৈরুত ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অন্য স্থানে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হচ্ছে।
লেবানন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তার দেয়ার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। আশ্রয় শিবির ও হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে।
২৫ বছর বয়সী আয়া আয়ুব বিবিসিকে বলেন, ‘তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের সাথে তাকে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তাহউিইটেট আল ঘাদির শহরতলীর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে কারণ সেখানে অবস্থান করাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। তার বাড়ির আশপাশে সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তিনি এখন বৈরুতের আরেকটি বাড়িতে আরো ১৬ জনের সাথে অবস্থান করছেন। আমরা শুক্রবার ছেড়ে আসি এবং যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। রাত ২টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। এরপর এক দল ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করে একটি নির্মাণাধীন আবাসিক ভবনে নিয়ে আসে। রাতে মোমবাতি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। খাবার ও পানি আনতে হচ্ছে বাহিরে থেকে।‘
৩৪ বছর বয়সী সারা তোহমাজ পেশায় সাংবাদিক। বিবিসিকে তিনি বলেন যে তাকে গত শুক্রবার বৈরুতের কাছে তার বাড়ি থেকে তার মা ও দুই সহোদরসহ বেরিয়ে আসতে হয়েছে।
তিনি জানান গাড়িতে সিরিয়া হয়ে তাদের জর্ডানে আসতে ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
তিনি বলেন ‘আমি মনে করি, আমরা ভাগ্যবান যে জর্ডানে আমাদের থাকার মতো জায়গা আছে। সেখানে মায়ের দিকে আত্মীয়রা আছে। পরে কী হবে আমরা জানি না এবং আবার কখন ফিরতে পারবো তাও জানি না।‘
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আন্তঃসীমান্ত লড়াই বেড়ে গিয়েছিল। হামাস ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর তখন ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হেজবুল্লাহ ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুঁড়েছিল।
এরপর থেকে হেজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ শত শত মানুষ মারা গেছে এবং উভয়পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
রোববার ইসরাইল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে হাউছিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। সেখান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রাস ইসা ও হুদাইদায় বন্দরে হামলা হয়েছে।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বন্দরে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে।
ইসরাইল বলছে হাউছিরা সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে তার পাল্টা হিসেবে তারা হামলা শুরু করেছে।
শিয়া গোষ্ঠী হাউছিরা ইয়েমেনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা ইসরাইলের হামলাকে ‘নিষ্ঠুর আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তারা হামলার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করে জানিয়েছে যে হামলা চারজন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে।
সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
হেজবুল্লাহ বা ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করে ওয়াশিংটন বলেছে বড় ধরনের সংঘাত হলে ইসরাইলের উত্তরে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের ঘরে ফেরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র : বিবিসি