২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কোটাপদ্ধতি ও সমান সুযোগের বাস্তবতা

-

বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরে কোটাপদ্ধতি চালু রয়েছে। কোটাপদ্ধতির হার বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে নিম্নরূপ- নারী ৬০ শতাংশ, পুরুষ ২০ শতাংশ, পোষ্য ২০ শতাংশ। এ ছাড়াও বিগত সরকারি ঘোষণামতে, বিজ্ঞান শাখায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কোটাপদ্ধতিতে এটা অপ্রয়োজনীয় তো বটেই এবং তা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতিগঠনে প্রতিবন্ধক। কোটাপদ্ধতিতে নিয়োগবিধি চালু হয়েছিল যখন বাংলাদেশ ছিল পশ্চাৎপদ নিম্ন আয়ের উন্নয়নশীল। তখন সমাজে নারী ও পুরুষের ব্যাপক বৈষম্য এবং নিম্ন শিক্ষা হারের জন্য ওই পদ্ধতি প্রয়োজনীয় ছিল; কিন্তু এখন বিশ্বায়নের যুগে সমগ্র বিশ্ব একটি গ্রামের মতো। বাংলাদেশ এ গিয়েছে বহু দূর পথ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০৪২ সালের মধ্যে এ দেশ উন্নত বিশ্বের সারিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে জেলার অন্যতম প্রতিবন্ধক এই কোটাপদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নিয়োগের ফলে ব্যাহত হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য। কারণ বাংলাদেশে বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে উচ্চ মেধাবীরা এ পেশায় সাধারণত নিয়োগ গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না। এখানে মধ্যম মানের মেধাবীরা পেশাগত ভিত্তি গড়ে যাদের বেশির ভাগেরই স্থায়ী ঠিকানা গ্রামাঞ্চল। গ্রামের একটি ছেলে তার উচ্চশিক্ষা শেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় পেশাগত ভিত্তি গড়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনে। কিন্তু কোটাপদ্ধতির গ্যাঁড়াকলে তাদের হাজারো স্বপ্ন মুকুলে ঝরে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাম্য না থাকায় ছেলেদের তুলনায় কম মেধাবী মেয়েরা সেই চাকরি পেয়ে যায়। ফলে জাতির উন্নত মেধার অপচয় ঘটেছে। একটি মেয়ের চাকরি হলে ওই মেয়েটি নিজে উপকৃত হয়। পক্ষান্তরে একটি ছেলের চাকরি হলে একটি পরিবার উপকৃত হয়, স্ত্রী পায় তার চাকরিজীবী স্বামী, মা-বাবা পায় পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং গোটা পরিবার উপকৃত হয়। বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার ৭২ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭০ শতাংশ, পুরুষ শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। সে হারে নারী কোটা ৬০ শতাংশ, আর পুরুষ কোটা ২০ শতাংশ। এই বৈষম্য বহাল থাকার যৌক্তিকতা আছে কি? নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষরা কত ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার হয় তা আরো একটি পরিসংখ্যান দিলে স্পষ্ট হবে। ধরা যাক কোনো উপজেলায় ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে এক হাজারটি আবেদন জমা হলো। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যদি সেখান থেকে ৩০০ আবেদনকারী পাস করল, তবে দেখা যাবে তার মধ্যে ২০০ জনই পুরুষ। এই ১০০টি পদের বিপরীতে ৬০ শতাংশ নারী হলে ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জন নারীর চাকরি হবে। পক্ষান্তরে ২০০ জন পুরুষ উত্তীর্ণ হলেও মাত্র ২০ জন চাকরির সুয়োগ পাবে। এ ছাড়াও পোষ্য ২০ জন থেকে নারীর চাকরি হবে ১২ জনের, সেখানে পুরুষের মধ্য থেকে হবে আটজনের। তাহলে ১০০ পদের বিপরীতে নারী নিয়োগ পাবে ৭২ শতাংশ। অন্য দিকে পুরুষ পাবে মাত্র ২৮ শতাংশ। এটা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। যেখানে পুরুষরাই সমাজের বিভিন্ন অর্থনৈতিক নির্ভরতা দায়িত্ব পালন করে; কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে মাত্র ২৮ শতাংশ। নারী-পুরুষের ‘সমতা’র কথা বলা হলেও তারা সমান সুযোগ পেল কি? কর্মদক্ষতার বিবেচনায় বিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষক ও নারী শিক্ষকের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে অনেকের পর্যবেক্ষণ। তাই সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। ২০৪২ সালে উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন আমরা দেখি। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান হার বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
মো: আবদুল হক আজাদ
প্রধান শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত)
কলাপাড়া, পটুয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement