২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘গণগ্রন্থাগার মন্ত্রণালয়’ চাই

-

জ্ঞান আহরণ, চর্চা, বিস্তার ও জ্ঞানের উপকরণ (বই ও অন্যান্য সামগ্রী) সংরক্ষণের সূতিকাগার হচ্ছে গ্রন্থাগার। যে দেশে গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারের কদর বেশি, সে দেশ শিক্ষা-দীক্ষায় তত উন্নত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশ উল্টো। দেশে বেসরকারি গ্রন্থাগারের পরিসংখ্যান তা-ই বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে একটি করে গ্রন্থাগার থাকার কথা। বাস্তবে এর ধারেকাছেও নেই।
গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ দেশে সরকার পরিচালিত পাবলিক লাইব্রেরি বা গণগ্রন্থাগার ৭১টি। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তথ্য মতে, নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা এক হাজার ৩৭৯। জেলাপর্যায়ে গণগ্রন্থাগার থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে শুধু জামালপুর জেলার দু’টি উপজেলায় আছে। দেশের আর কোনো উপজেলায় নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে তো পরের কথা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এটাই হলো আমাদের ‘অর্জন’।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রতি বছর বেসরকারি গ্রন্থাগারকে অনুদান দিয়ে থাকে। আবেদনপ্রাপ্তির পর যাচাই-বাছাই শেষে এই অনুদান দেয়া হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেকে আবেদন করেন না। এই অনুদান কেউ পায়, কেউ পায় না। আবার অস্তিত্বহীন গ্রন্থাগার থেকে চেক ফিরে আসার নজিরও আছে। ‘টেকসই নীতিমালা’র অভাবে এ কর্মসূচি ফলপ্রসূ হচ্ছে না। অনুদানের অর্ধেক টাকার বই, বাকি অর্ধেকের চেক দেয়া হয়।
গ্রন্থাগার পরিচালনায় নিয়োজিত গ্রন্থাগারিকের জন্য সরকার থেকে ইনসেনটিভ (বেতন) নেই। ফলে অনেক গ্রন্থাগারেই কিছুকাল পর অনুদানের বই হাওয়া হয়ে যায়। তাই গণগ্রন্থাগার মন্ত্রণালয় গঠন করে দেশের গ্রন্থাগারগুলোকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হোক। গ্রন্থাগারগুলোকে এমপিও দিয়ে প্রাণসঞ্চার করা হোক। নইলে আগামী ৫০ বছরেও গ্রন্থাগারগুলো দাঁড়াতে পারবে না।
গ্রন্থাগার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ‘টেকসই গ্রন্থাগার নীতিমালা’। গ্রন্থাগারগুলোকে এমপিওভুক্ত করা আবশ্যক। তাহলেই এসব গ্রন্থাগার টিকে যাবে। কেউ হয়তো জায়গা দিলেন, কেউ ঘর ভাড়া করে পাঠাগার চালু করে দিলেন (যেমনটি হচ্ছে); কিন্তু গ্রন্থাগারিকের বেতন দেয়ার সামর্থ্য সবার নেই। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না, গ্রন্থাগারিকের কাজ চলে না। ইউনিয়ন/গ্রামপর্যায়ে মানসম্মত একটি গ্রন্থাগার চালাতে অন্তত তিনজন স্টাফ দরকার। এক. গ্রন্থাগারিক, দুই. অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও তিন. পিয়ন (এমএলএসএস)। সে ক্ষেত্রে অন্তত লাইব্রেরিয়ান হলেও নিয়োগ দেয়া হোক।
গ্রন্থাগারবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করেছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগারের মাসিক বেতন : বেসিক ১৬,৮০০, ইনক্রিমেন্ট ৮৪০ (৫ শতাংশ), বাড়িভাড়া ১,০০০ ও চিকিৎসাভাতা ৫০০; সর্বমোট ১৯,১৪০ টাকা। অফিস সহায়ক-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের বেসিক ১০,১৯১, ইনক্রিমেন্ট ৫০৯ টাকা, বাড়িভাড়া ১,০০০ ও চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা; সর্বমোট ১২,২০০ টাকা। পিয়ন (এমএলএসএস) বেসিক ৮,৬৭৭, ইনক্রিমেন্ট ৪৩৩, বাড়িভাড়া ১,০০০ ও চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা; সর্বমোট ১০,৬১০ টাকা।
বাংলাদেশে বেসরকারি গ্রন্থাগারের ইতিহাস বেশ পুরনো। এখানে দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন গ্রন্থাগারও আছে। আবার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গেছে। গণগ্রন্থাগারকে বলা হয় ‘পিপলস ইউনিভার্সিটি’ বা ‘গণবিশ্ববিদ্যালয়’। এই গণবিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকিয়ে রাখতে হলে ‘গণগ্রন্থাগার মন্ত্রণালয়’ গঠনের বিকল্প নেই।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি
ও বেরাইদ গণপাঠাগার, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement