০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`
হোলে আর্টিজান হামলা

আদালত চত্বরে বিনা বাধায় আইএস-এর প্রতীক প্রদর্শন করলেন ফাঁসির আসামি

আদালত চত্বরে বিনা বাধায় আইএস-এর প্রতীক প্রদর্শন করলেন ফাঁসির আসামি - বিবিসি

হোলে আর্টিজান হামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান বুধবার আদালত চত্বরে যেভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বিনা বাধায় 'জঙ্গি' সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতীক প্রকাশ্যে প্রদর্শন করেছে, তাতে নানা রকম প্রশ্ন উঠছে।

বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের একজন রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে দেখা যায় মাথায় একটি কালো টুপি।

কালো ওই টুপিটির উপর ছিল অবিকল আইএস-এর কালো পতাকাটির উপর সাদা রঙে আঁকা প্রতীকটি।

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা রাকিব হাসনাত। তিনি জানান, রিগ্যান রায় ঘোষণার পরই আদালত কক্ষেই কোনো এক ফাঁকে মাথায় টুপিটি পরে ফেলেন। তারপর তাকে পাঁচ তলা থেকে নিচতলায় প্রিজন ভ্যানে এনে ওঠানো পর্যন্ত তিনি মাথায় পরে ছিলেন ওই টুপিটি।

এ সময় ওই এলাকায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শত শত সদস্য। রিগ্যানকেও ধরে ছিল পুলিশের কয়েকজন। কিন্তু কেউই রিগ্যানকে এই টুপিটি পরতে বাধা দেয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন।

এমনকি টুপিটি খুলে নেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা যায়নি কাউকে।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী রিগ্যান যখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিলেন, তখন তাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, 'আমি আইএস-এর লোক'।

আদালত কক্ষ থেকে প্রিজন ভ্যানে এনে তোলা পর্যন্ত আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আইএস-এর এই প্রতীক প্রদর্শন করেন রিগ্যান।

রাকিব হাসনাত জানাচ্ছেন, আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকেরা বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবুর নজরে আনেন। তখন তিনি পরামর্শ দেন, রিগ্যান কীভাবে এ টুপিটি পেল- সেই প্রশ্ন সে যাদের হেফাজতে আছে তাদেরকে করতে।

অবশ্য পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রিগ্যানের এই আইএস-এর প্রতীক প্রদর্শন করা এবং টুপিটি সে কীভাবে সংগ্রহ করলো তা নিয়ে তদন্ত করবেন তারা।

রাকিবুল হাসান রিগ্যানসহ হোলে আর্টিজান হামলা মামলার সব আসামীই ছিল কাশিমপুর কারাগারে।

এটি বাংলাদেশের একটি হাই সিকিউরিটি প্রিজন বলে পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ আসামিদেরকে সাধারণত এই কারাগারে রাখা হয়। কারাগারের বাইরের যেকোনো সামগ্রী প্রবেশে সেখানে কড়াকড়ি থাকে।

সেক্ষেত্রে এরকম একটি স্পর্শকাতর প্রতীক সম্বলিত টুপি কীভাবে রিগ্যানের কাছে পৌঁছালো- তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে এমন একটি দিনে রিগ্যান এ প্রতীকটি প্রদর্শন করলো যেদিন হোলে আর্টিজান হামলা মামলার রায় প্রদান উপলক্ষে নিরাপত্তা কড়াকড়ি জোরদার করা হয়েছিল।

নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর অজ্ঞতা?

রিগ্যান কীভাবে এই টুপিটি সংগ্রহ করলেন, এই প্রশ্নের পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্নও উঠে এসেছে - কেন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দিলেন না কিংবা তার মাথা থেকে টুপিটি খুলে নেয়ার চেষ্টা করলেন না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলন, "জঙ্গিদের মনোভাব ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর অজ্ঞতার কারণেই তারা এরকম একটি বিতর্কিত প্রতীক সম্বলিত পোশাকের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি।"

তিনি আরো বলেন, "ওই ব্যক্তি এটিই চেয়েছিল যে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর তার এই প্রতিবাদ যেন প্রচারিত হয়। এটি জঙ্গিদের এক ধরণের অনুপ্রেরণা।"

এ বিষয়ে অজ্ঞতা ছাড়াও মৃত্যুদণ্ড পেতে যাওয়া একজন 'জঙ্গি'র কাছে থাকা আরবি প্রতীক সম্বলিত পোশাক ধর্মীয় কারণে পুলিশ কেড়ে নেয়নি বলে মনে করেন সাখাওয়াত হোসেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement