উত্তরায় দম্পতির ওপর হামলার ঘটনায় পুরো চক্র শনাক্ত

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মেহেবুল হাসান (৩৭) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তিকে (২৮) প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পুরো চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ও মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এই ঘটনায় জড়িত আরো তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হলো।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

গ্রেফতার পাঁচজন হলেন, মো: মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২), মো: আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২), সজীব (২০) ও মেহেদী হাসান সাইফ (২৪)।

আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপির ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সোয়া ৯টায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ খবর পায় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাসার সামনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টহল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মো: মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম নাসরিন আক্তার ইপ্তি উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তি দম্পতি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার সময় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের বাসা নম্বর ১০-এর সামনে পৌঁছান। এ সময় উক্ত স্থানে তিন ব্যক্তি দু’টি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুত গতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সে সময় রিকশায় চার বছরের একটি শিশু তার মায়ের সাথে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে মোটরসাইকেলের চালক গ্রেফতার আসামি মো: মোবারক হোসেনের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে। ওই সময় রিকশার পিছনে থাকা ভিকটিম দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করে। সে সময় রিকশার যাত্রীরা চলে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন মেহেবুল হাসানের সাথে তর্ক শুরু করে এবং একপর্যায়ে তাকে মারধর শুরু করে। এ সময় তারা বলতে থাকে ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’। সে সময় ভিকটিম দম্পতি আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারী একজনকে ধরে ফেলে ও তার মোটরসাইকেল আটক করে। এ সময় ফোন করে সে তার আরো কয়েকজন সহযোগীদের ডেকে নিয়ে আসে। তারা দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রামদা দিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় নাসরিন আক্তার ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে। এতে উক্ত দম্পতি শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে। পুলিশ আহত দম্পতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

থানা সূত্র আরো জানায়, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি টিম মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ) বিকেল ৪টায় আব্দুল্লাহপুর পশ্চিম পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রামদা দিয়ে ভিকটিমদের কুপিয়ে আহত করা আসামি আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার হেফাজত থেকে ঘটনার সময় তাহার পরিহিত হালকা জলপাই রংয়ের একটি ফুলহাতা শার্ট জব্দ করা হয়। আলফাজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ২টায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে সজিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা অপর এক আসামি মেহেদী হাসান সাঈফকে গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন মাজার বস্তি এলাকা থেকে আজ ভোর ৫টায় গ্রেফতার করা হয়। সাঈফের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় তার পরিহিত একটি শার্ট জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির ও মেহেদী হাসান সাইফের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ নদীর পাড় থেকে আজ সকাল ১০টায় ঘটনায় ব্যবহৃত দু’টি রামদা উদ্ধার করা হয়।