২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ মাঘ ১৪৩১, ২০ রজব ১৪৪৬
`

ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে জিয়াউল আহসানের আবেদন

৩ হাজার পুলিশ মারা হয়েছে, বললেন জিয়াউল আহসানের বোন
-

আন্তর্জাতিক অপারাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন হত্যা, গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আগামী ২২ জানুয়ারি (বুধবার) আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে জিয়াউল আহসানের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এম আই ফারুকী এবং জিয়াউল আহসানের বোন আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শুনানিতে এম আই ফারুকী আদালতে সংবিধান, জেনেভা কনভেনশন, রোমস্টাটিউট উল্লেখ করে জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন।

এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘আমরা এখানে রিলেভেন্ট কিছু পাচ্ছি না।’

এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যে আর্গুমেট করেছেন তা অপ্রাসাঙ্গিক। এ ধরনের আর্গুমেন্ট এখানে শোনার এখতিয়ার নেই। এসব বলতে তাদের সাংবিধানিক আদালতে যেতে হবে। তারা যে অপ্রাসঙ্গিক আর্গুমেন্ট করেছে সেজন্য তাদের জরিমানা করা উচিত।’

জিয়াউল আহসানের অপরাধের কথা উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে হান্ড্রেড অফ মার্ডারের অভিযোগ আমাদের কাছে রয়েছে এবং সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। অপহরণ করেছে, জোর করে আটক রেখে নির্যাতন করেছে। অন্ডকোষে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। কাউকে মানবতা দেখায়নি। কাউকে পুড়িয়ে দিয়েছে।’

জিয়াউল আহসানের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা মিডিয়ায় আনা এবং আদালতকে বিব্রত করার জন্য এ আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদন করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য বড় ধরনের জরিমানা করা উচিত।’

শুনানি শেষে অদালত আগামী ২২ জানুয়ারি বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেন।

শুনানির বিষয়ে করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আদালতে একটি আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযুক্ত আসামি জিয়াউল আহাসানের পক্ষে তার আইনজীবী এই ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে একটি পিটিশন দায়ের করেছিলেন। সেই পিটেশনের মূল বক্তব্য ছিল, এই ট্রাইব্যুনালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা নেই। কারণ বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। যে কারণেই বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত তারা আরেকটি গ্রাউন্ড নিয়েছিলেন। যে অধ্যাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে সেটি যে সরকার করেছিল তার বৈধতা নেই। একইসাথে এ ধরনের কার্যক্রম করতে বর্তমান সরকারের বৈধতা নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা। এ কয়েকটি গ্রাউন্ডে তারা দাবি জানিয়েছিলেন যে, আসামিকে যেন অব্যাহতি দেয়া হয়।’

‘আমরা এর বিপক্ষে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, তারা তারা সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে এটা এই ট্রাইব্যুনালের বিচার্য বিষয় নয়। সরকারের অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা আছে কি না তারা চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা বলেছি, এটা এই ট্রাইব্যুনালের বিবেচ্য বিষয় নয়। যদি কোনো অধ্যাদেশ বা আইন তাদের কাছে মনে হয়, সংবিধানসম্মত হয়নি, তাহলে তারা সেটা চ্যালেঞ্জ করার জন্য সাংবিধানিক আদালত অর্থাৎ হাইকোর্টে যেতে পারতেন। তা না করে তারা একটি ফৌজদারি আদালতে আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন। যেটি অকল্পনীয়। এটার জন্য সাংবিধানিক আদালতই ফোরাম, এটা আমরা তুলে ধরেছি।’

‘আমরা আরো তুলে ধরেছি মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার যখনই হবে এবং যে ব্যক্তি এসব অপরাধের আসামি হবে, তার কোনো মৌলিক অধিকার থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। যাদের ওপর এই মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার অভিযোগ থাকবে তারা মৌলিক অধিকার দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করতে পারবে না। সুতারং এই আইনের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি উনারা তুলে ধরছেন, সেটা বিবেচনা করারই কোনো সুযোগ নেই। আর উনারা হাইকোর্টে গেলেও এই আইনটা অবৈধ হবে না কারণ এটা সাংবিধানিক প্রটেকশনের আওতায় পড়ে।’

৩ হাজার পুলিশ মারা হয়েছে : বললেন জিয়াউল আহসানের বোন
অন্যদিকে জিয়াউল আহসানের বোন ও তার আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধে যে অপরাধী ছিল তাদের বিচার করার জন্য এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল। এই ট্রাইব্যুনালে এখন যে বিচার হচ্ছে সেটা জুলাই-আগস্ট, এটা হচ্ছে একটা পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট। এখানে কোনো যুদ্ধের বিশেষত্ব নেই। এই একটাই প্রশ্ন এই ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে কোরাম নন জুডিস। অর্থাৎ এই ট্রাইব্যুনালের এই মামলা পরিচালনা করার কোনো ক্ষমতা নেই।’

‘আমরা আবেদনে বলতে চেয়েছি, এখানে যারা বিচারপতি আছেন উনারা হাইকোর্টের বিচারপতি। উনাদেরকে হাইকোর্টে থাকা উচিত। উনাদের এখানে বিচার করার এখতিয়ার নেই। আবেদনে আমরা এই কথাটাই বলেছি,’ বলেন নাজনীন নাহার।

এক প্রশ্নে জবাবে জিয়াউল আহসানের বোন আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, ‘প্রসিকিউশন বলে না যে প্রেস ট্রায়াল। অপনারা আমাকে এখানে কয়দিন দেখেছেন। আপনারা আসেন আমাকে দেখেন না। এবং আমি কিন্তু এখানে আসতেও চাই না কখনো। আপনাদের অনুরোধের জন্য কিন্তু আমি এখানে এসেছি। উনি উনার মনের মাধুরী মিশিয়ে উনি প্রসিকিউশন সব সময় এখানে বক্তব্য দেন। উনার বিভিন্ন রকমের বক্তব্য আছে। আমি আপনাদের কাছ থেকে একটি জবাব আশা করব, যখন করো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, অভিযোগ তদন্ত হবে, চার্জশিট হবে। তারপর সেটার বিচার হবে। তারপর তাকে অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করবেন। তার আগে তাকে আপনি তাকে অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করতে পারেন না। কিন্তু প্রসিকিউশন কি করছে? মনের মাধুরি মিশিয়ে এখনে বলতেছেন এই হয়েছে। সেই হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই যে উনি এত হিউম্যান রাইটসের কথা বলেন, এখানে যে তিন হাজার পুলিশ মারা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রসিকিউশন কি কোনো কথা বলে? তাদের কি হিউম্যান রাইটস নেই? তাদেরকে যখন ঝুলিয়ে পেটানো হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কি কোনো হিউম্যান রাইটস নেই?’

এসময় সাংবাদিকরা জানতে চান তিন হাজার পুলিশ মারা হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর সাংবাদিকরা জানতে চান, এটা কাদের তথ্য? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার তথ্য না। জাতিসঙ্ঘের তথ্য যেটা, সেখানে আছে।’ এরপর তিনি আবারো বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি।’

পুলিশের সাবেক ৩ সদস্যকে কারাগারে প্রেরণ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা পুলিশের সাবেক তিন সদস্যকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশ দেন।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই তিনজনের বিরুদ্ধেই আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এরমধ্যে দুজনের ব্যাপারে নতুন গ্রেফতারি পরোয়ান এবং একজনের ব্যাপারে আগেই পরোয়ানা ইস্যু হয়েছিল। তাদের সবাইকে আজকে আদালতে হাজির করা হলে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement