জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সবাইকে খালাস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৮, আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪০
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসাথে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলার অন্য আসামিরাও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ সর্বস্মতিক্রমে এ রায় দেন।
আপিল বিভাগ তার পর্যবেক্ষণ বলেছেন, এই মামলার বিচারের প্রক্রিয়া ছিল বিদ্বেষপূর্ণ। এ কারণে আপিলকারী এবং যারা আপিল করেনি সকলকে খালাস দেয়া হলো।
আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, সকল আপিল এই বিভাগের (আপিল বিভাগ) সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা মঞ্জুর করা হলো। সে অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ এবং ট্রায়াল কোর্ট উভয়ের রায় বাতিল করা হলো। সকল আপিলকারী তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত না হয়ে তাদের সম্পূর্ণভারে খালাস দেয়া হলো। এই রায় অন্যান্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা কোনো আপিল করেননি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আপিলকারীদের এবং অন্য সকল আসামিদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা হবে, তাদের নির্দোষ পুনঃনিশ্চিত করা হবে এবং এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অযৌক্তিক কার্যক্রমের অবসান ঘটাবে।
জামিনে থাকা সকল আপিলকারীকে অবশ্যই তাদের নিজ নিজ জামিন বন্ড থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
আদালতে আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। সাথে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া ও মো: মাকসুদ উল্লাহ।
কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যে মামলায় কিছুই ছিল না সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ সাজা পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, (এ মামলা) একটা বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক। কার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা? পুরো জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। সারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা। আজ আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়েছে। এবং যারা আপিল করতে পারেননি তারাও নিদোষ প্রমাণিত হলেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ফুলকোর্ট থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর অপর সব আসামি ন্যায় বিচার পেয়েছেন। এই মামলাটা ছিল শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা, প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে খাটো করার জন্য নিশ্চিহ্ন করার জন্য রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় দায়ের করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আজ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়া নিষ্পাপ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আজকের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চ ভিলাস এবং ফ্যাসিজমকে পদীর্ঘায়িত করার জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর অপর আসামিদের এইখানে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। সব কিছু ছিল রাজনৈতিক স্কিমের অংশ। পাঁচ বছরের সাজাকে ১০ বছর করা হয়।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটা আপিল ছিল। চারটাই মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশন এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। এবং সাথে সাথে যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরকেও (খালাস দিয়েছেন)। যেহেতু পুরো মামলাটাই বলেছেন ম্যালিসাস প্রসিকিউশন (বিদ্বেষপূর্ণ কার্যধারা)। তাই তারাও এ সুবিধা পেয়ে খালাস পেলেন। দু’জনের মধ্যে একজন তারেক রহমান। আরেকজন কামাল সিদ্দিকী। রায়টি দুদককে জানাব। তারপর দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা পৃথক দু’টি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসাথে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসাথে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।