২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিহত

-

- গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিসরে ব্লিনকেন
- হুঁশিয়ারি দিয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা জানাল হামাস
- ইসরাইলি হামলায় আরো ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিমতীরে ইসরাইলের নৃশংস হামলায় মোট নিহতের ১১ হাজারই শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দশ মাসের বেশি সময় ধরে পুরো গাজা অঞ্চলে হত্যালীলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলের বাহিনী। এতে যে পরিমাণ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১১ হাজার একজন। এ ছাড়া ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৭২ জনে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ৮৮৮ জন। এতে আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে পশ্চিমতীরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮৪ জন শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন ৪২৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের ৭ অক্টোবর দখলদারির বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তেল আবিবের দাবি সে সময় হামাসের হাতে ১,২০০ ইসরাইলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামাস সে সময় ২৫০ জন ইসরাইলি নাগরিককে আটক করে গাজায় নিয়ে আসে। পরে হামাসকে নির্মূলের নামে পুরো গাজায় অমানবিক হত্যাকাণ্ড শুরু করে ইসরাইল। তারা এখনো একাধারে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তেল আবিব দিনকে দিন গাজায় তাদের হামলার মাত্রা বৃদ্ধি করছে। যেসব অঞ্চলকে ‘মানবিক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল সেখানেও এখন হামলা জোরদার করেছে নেতানিয়াহুর বাহিনী।
গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরার স্থানীয় সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বৈরুতে ইসরাইলের বোমা হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এখনো অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে যাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে পারছে না উদ্ধারকর্মীরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৪১ হাজার ২৫২ ফিলিস্তিনি। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় একই পরিবারের ৭ সদস্য নিহত
বুড়িজ শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় একই পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। এই বিমান হামলার শিকার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা দেইর আল-বালাহ এবং অন্যান্য এলাকার পরিস্থিতি বসবাসের অযোগ্য হওয়ার ফলে গত কয়েক সপ্তাহে আগেই মাত্র তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছিল। এখন পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পরেও প্যারামেডিকরা বিমান হামলার জায়গায় পৌঁছাতে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে পারেনি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিসরে ব্লিনকেন
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল মঙ্গলবার মিসর সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এই সফরে বন্দীদের মুক্তির বিষয়েও মিসরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র রয়টার্স। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা। যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় বাধা দু’টি। একটি হলো গাজা ও মিসরের মধ্যকার অসামরিক অঞ্চল ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় ইসরাইল। অন্যটি হলো বন্দিবিনিময়ের রূপরেখা চূড়ান্ত করা। আলজাজিরার খবরে জানা গেছে, মিসরের সাথে ইসরাইলের ১৯৭৯ সালের ক্যাম্প ডেভিড শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে গাজার দক্ষিণে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটার প্রস্থ এই ফিলাডেলফি করিডোর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই করিডোরকে ‘অসামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়।

‘নতুন যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন নেতানিয়াহু
উত্তর ইসরাইলের বাসিন্দাদের নিজ নিজ ঘরে ফেরাতে ‘নতুন যুদ্ধের লক্ষ্য’ ঘোষণা করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গতকাল মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা উত্তর ইসরাইলের বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন সুযোগ করে দিতে তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য প্রসারিত করে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসরাইলের নতুন যুদ্ধের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ যুদ্ধে আগের যুদ্ধগুলোর তিনটি শর্তও যুক্ত হয়েছে। যেমন- হামাসের সামরিক শক্তি ও শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করা; সব বন্দীকে মুক্ত করা ও এটা নিশ্চিত করা যে গাজা আর ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।

ইসরাইলি হামলায় আরো ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা উপত্যকাজুড়ে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় আরো ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু ফিলিস্তিনি। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্সের বরাত দিয়ে আল জাজিরার খবরে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গাজা শহরে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পুরো গাজায় গত ২৪ ঘণ্টার হামলায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক দেহ চাপা পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের উদ্ধারে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছেন।

হুঁশিয়ারি দিয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা জানাল হামাস
গাজায় ‘দীর্ঘ যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার সোমবার এ কথা বলেছেন। যদিও ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গত সপ্তাহে বলেন, গাজায় সামরিক সংগঠন হিসেবে হামাসের ‘আর অস্তিত্ব নেই’। সিনওয়ার বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হামাসের রয়েছে। তারা গাজায় প্রায় এক বছর ধরে যুদ্ধ করে আসছে। গাজা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। সিনওয়ার হামাসের ইয়েমেনি মিত্রদের কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, ‘আমরা নিজেদেরকে দীর্ঘস্থায়ী এক যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছি।’ তিনি গত মাসে নিহত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন।

 


আরো সংবাদ



premium cement