মাথায় পুলিশের আঘাতে বাকরুদ্ধ শরীফুল, ভেঙেছে হাঁটুও
- হামিম উল কবির
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১
দেশব্যাপী ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা আর সহ্য হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেন এনজিও কর্মী শরীফুল ইসলাম (৩৩)। একা নন, এলাকার বন্ধু ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে মানিকগঞ্জ শহরে মিছিলে নামেন। সেদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের মেইনরোডে মিছিলের এক পর্যায়ে পুলিশ প্রথমে গুলি করে, পরে টিয়ারগ্যাস ছোড়ে এবং ব্যাটন চার্জ করে। পুলিশের মোটা লাঠির আঘাতে শরীফুলের মাথা ফেটে যায়, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। শুধু মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ থেমে ছিল না, হাঁটুতে আঘাত করে হাঁড়ও ভেঙ্গে দিয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকলে মিছিলকারীদের অন্য একটি গ্রুপ শহীদুল ইসলামের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন থেকে তার বাড়িতে ফোন করে আহত হওয়ার কথা জানায়। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের পুরনো ভবনের পঞ্চম তলার ৫০২ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছেন শরীফুল ইসলাম। মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর ৫ আগস্টই বেলা দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানান শরীফুলের ছোট ভাই মো: সবুজ।
সবুজ গতকাল মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে জানান, মাথায় আঘাত পাওয়ার তার ভাই আর কাউকে চিনতে পারছেন না, কথাও বলতে পারছেন না। কথা বলতে চেষ্টা করেন কিন্তু কোনো কিছুই স্পষ্ট করে বলতে পারেন না। শুধু কান্না-কাটি করছেন, চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ে। সবুজ জানান, ৫ আগস্ট থেকেই তার ভাই কথা বলতে পারছেন না।
মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার আড়ুয়া ইউনিয়নের ধুতুরাবাড়ি গ্রামের মানিক মোল্লার পুত্র শরীফুল ইসলাম। ছোট ভাই মো: সবুজ জানান, সাভারের হেমায়েতপুরের উদ্দীপন এনজিও’র অ্যাকাউন্ট্যান্ট শরীফুল ইসলাম সেদিন খুবই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়েই গিয়েছিলেন মিছিলে। কারণ শেখ হাসিনার ক্যাডারদের অত্যাচারে মানুষ বাড়িতে ঘুমাতে পারছিল না। কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানালেই মানুষের ওপর নেমে আসতো পুলিশি নির্যাতন।
মানুষকে গুম করে ফেলা হচ্ছিল। ২০০৮ সালের পর থেকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি মানুষ। এমনকি ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনেও ভোট দিতে দেয়া হয়নি। ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামলে শত শত ছাত্রকে পুলিশ হত্যা করেছে গুলি করে। এসবের প্রতিবাদ করতেই শরীফুল রাস্তায় নেমে আসেন।
কিন্তু রাজপথে কিছুক্ষণ মিছিল করতে না করতেই পুলিশী হামলার শিকার হন। পুলিশ মাথায় এমনভাবে আঘাত করে যে ব্রেইনের উপরের শক্ত আবরণ কয়েক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। একই সাথে বাম পায়ে হাঁটুতেও আঘাত করে হাড় ভেঙ্গে দেয়। ঢাকা মেডিক্যালে আনার পর হাঁটুর নিচে বিশেষভাবে রড লাগিয়ে জোড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা। হাঁটু হয়তো একসময় জোড়া লেগে যাবে কিন্তু তার ভাই কথা বলতে পারবে কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। শহীদুল তার পরিচিত কাউকে চিনতে পারছেন না, এমনকি ঢাকা মেডিক্যালে তার শ্যালক ও ভাই শরীফুল তাকে সেবা শুশ্রƒষা করছেন তাদেরও চিনতে পারছেন না। শরীফুল বলছিলেন, অপারেশন করে তার ভাইয়ের মাথার যেখানে সেলাই করে দেয়া হয়েছে সেখানে মাথার শক্ত আবরণ নেই, ফেলে দেয়া হয়েছে। কারণ ব্রেইনের ওপরের শক্ত আবরণটি গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল।
সবুজ জানান, তার ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসায় সুস্থ হচ্ছে না। এই সরকার তো ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। এই সরকারের উচিত শরীফুলের মতো যারা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে তাদের বিশেষ যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দেয়া। এখানে আনার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩টি অপারেশন করেছেন চিকিৎসকরা। ৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
সবুজ জানান, ঢাকা মেডিক্যালে এখন আর চিকিৎসায় কোনো খরচ হচ্ছে না এজন্য সরকারের প্রতি সবুজ ও তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা কিন্তু তার ভাইয়ের আরো উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ শরীফুলের ৪ বছর বয়সী ছেলে ও স্ত্রী বাড়িতে অপেক্ষা করছেন তাকে শরীফুল যেন আগের মতো সুস্থ অবস্থায় বাড়ি যেতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা