২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৩০ বছরে পদার্পণ

-

শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে গ্রাহকের পছন্দের ব্যাংক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক (এআইবি) পিএলসি। ৩৬ লাখ গ্রাহকের সাড়ে ৫১ হাজার কোটি টাকার আমানত ও সাড়ে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এ আস্থার চিত্রটাই প্রতিফলিত করে। দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্যাংকটির সবগুলো সূচকেই এ ব্যাংক সেরা অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন ও ২০২৪ সালের জুনভিত্তিক অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিরতার কোনো প্রভাবই এ ব্যাংককে স্পর্শ করতে পারেনি। ছোট-বড় সব ধরনের গ্রাহকের সব লেনদেন চাহিদা সময়মতো পূরণ করে এআইবি পিএলসি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমসাময়িক ব্যাংকগুলো যেখানে গ্রাহকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে এ ব্যাংকটি প্রতিনিয়তই সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ কোনো সুবিধাও নিতে হয়নি। সঙ্কটকালে সেবা প্রদানের এ চিত্রই বলে দেয় ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি কতটা সুদৃঢ় ও নিখুঁত। বিগত কয়েক বছর ধরে করোনা মহামারী, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ডলার সঙ্কটসহ দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈরী প্রেক্ষাপটেও এআইবি কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও গ্রাহক-শুভানুধ্যায়ীদের আস্থা ও বিশ্বাস ব্যাংকটিকে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে বলে তারা মনে করেন।

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ব্যাংকটি সেবার মান ও শরিয়াহ পরিপালনের দৃঢ়তা নিয়ে এ বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ২৯ বছর পেরিয়ে ৩০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শরিয়াহ পরিপালনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে ছিল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। একই সাথে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিশ্চিত করেছে সর্বাধুনিক ব্যাংকিং সেবা। এ অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন আর্থিক সূচকে শীর্ষে উঠে এসে নতুন নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। বর্তমানে দেশজুড়ে এ ব্যাংকের ২২৪টি শাখা, ৭২টি উপশাখা, ৭৪৫টি এজেন্ট আউটলেট, ২২৫টি এটিএম বুথের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৮২২.০১ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা অর্জনের দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ব্যাংকের ডিপোজিটের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা যেখানে ২০২২ সালে ডিপোজিট ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ২০২৪ সালের জুনে ডিপোজিট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৯ শতাংশ।
প্রায় ৩৬ লাখ গ্রাহকের এই ব্যাংক দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যেখানে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার বিনিয়োগ গ্রাহক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে ছুটে চলেছে। বিশেষ করে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে ব্যাংকটি। বৃহৎ শিল্প বিনিয়োগ থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপশাখা ও এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে জামানতবিহীন বিনিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে জুন-২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা ও ২০২২ সালে ছিল ৪০ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর বিনিয়োগে গ্রোথ ছিল ৯.৮ শতাংশ।

আমানত-বিনিয়োগের অনুপাত একটি নির্দিষ্টসীমার মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা রয়েছে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক বরাবরই সেই নির্দেশনা পরিপালন করে আসছে। ২০২২ সালে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এ অনুপাত ছিল ৯০.২৫ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ছিল ৯১.৩৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন মাসে ব্যাংকটির আমানত-বিনিয়োগ অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯১.২৩ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমা অর্থাৎ ৯২.০০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।
বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক শ্রেণিবিন্যাসিত বিনিয়োগ বা ক্ল্যাসিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। গত বছর ব্যাংকটির ক্লাসিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট ৬.৭৬ শতাংশ থাকলেও চলতি বছর জুন মাসে তা ০.২৬ শতাংশ কমে ৬.৫০ শতাংশ এ দাঁড়িয়েছে। সমসাময়িক ব্যাংকগুলোর তুলনায় এ পরিসংখ্যান আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে একটি শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবেই প্রতীয়মান করে। দেশের প্রধান রফতানি শিল্প-তৈরী পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে এ ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পকারখানা, কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পাটকল, নৌপরিবহন, সড়ক পরিবহন, যানবাহন, কোল্ড স্টোরেজ, অটো রাইস মিল ইত্যাদি অসংখ্য সফল প্রতিষ্ঠান আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।

একটি নির্ভরশীল আধুনিক ব্যাংক হিসেবে শ্রেণী-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এ আস্থার প্রমাণ রয়েছে ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যানেও। ২০২৩ সালে ব্যাংকের আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ২৬ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে রফতানির পরিমাণ ২০ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রফতানির পরিমাণ ১২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।
জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে দেশের সেরা ব্যাংকগুলোর একটি এআইবি পিএলসি। ২০২৩ সালে এ ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে, যেখানে ২০২২ সালে ছিল আট হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।
নারী ক্ষমতায়ন ও নারীদের আর্থিক উন্নয়নে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে দেশব্যাপী দুই হাজার ৭৫০টি গ্রামের ৬১ হাজার ৫৮ জন নারী বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনার জন্য কাজ করছে এ ব্যাংক। ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্স সেবা ‘ইসলামিক ওয়ালেট’ এর মাধ্যমে দেশব্যাপী এক লাখেরও বেশি গ্রাহক উপকৃত হচ্ছেন। ব্যাংকের অনলাইনভিত্তিক অ্যাপ ‘আই ব্যাংকিং’ এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৭০ হাজার লেনদেন হচ্ছে। ইসলামিক ওয়ালেট ও আই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বাংলা কিউআরের পেমেন্ট করা যায়। আর্থিক সক্ষমতা, সুনসান ও দূরদর্শিতায় এ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে পেয়েছে নানা পুরস্কার।


আরো সংবাদ



premium cement