১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কেয়ার হোমের লাইসেন্স নিয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আইনি বিজয়

-


লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছে, ব্রিটেনের উচ্চ আদালতে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেড বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলায় কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স ফার্ম সাফল্য লাভ করেছে। হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ এই রায় কেয়ার কোম্পানি এবং কর্মীদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
গত শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক, আইনজীবী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স লিমিটেডের সিনিয়র পার্টনার ব্যারিস্টার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, হোম কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি এই দেশে মোস্ট ভালনারেবল মানুষের পরিষেবা প্রদানে বিশেষ অবদান রাখছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ঢালাওভাবে অনেক কেয়ার কোম্পানির স্পন্সরশিপ লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এর ফলে একদিকে এই বিশাল বিজনেস ও সেবা সেক্টর তথা কেয়ার কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সাথে কেয়ার কোম্পানিগুলোতে যুক্ত বা বিদেশ থেকে আগত কর্মীরা তাদের বৈধতা হারাচ্ছেন।

এমন কঠিন ও জটিল বিষয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, কমিউনিটির আইনি সেবায় সক্রিয় ও যথার্থ ভূমিকা পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এরই মাঝে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স একটি অনন্য সফলতা অর্জন করেছে। যা বহু মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের অন্যতম পার্টনার খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। তার সহযোগী ছিলেন সৈয়দ তাসবির হাসান। এই মামলায় কেয়ার হোমের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত ব্যারিস্টার যেইন মালিক কেসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার উইলিয়াম আরউইন। প্রায় এক বছর ধরে চলমান এই মামলার রায় অতি সম্প্রতি রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের কিংস বেঞ্চ ডিভিশন থেকে প্রদান করা হয়, যা ন্যাশনাল আর্কাইভেও প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়টি এখন থেকে হাইকোর্টসহ সব নিম্ন আদালাতের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।

ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম জানালেন, যথাযথ জবাবের সুযোগ না দিয়ে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করাকে বেআইান ঘোষণা করেছেন হাইকোর্টের জজ ডেভিড পিয়েভস্কি কেসি। মামলার রায়ে বলা হয়, এটি সরকারের প্রকাশিত নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, বৈধ প্রত্যাশার বিপরীত এবং সাধারণ আইনে পদ্ধতিগতভাবে অন্যায্য। মাননীয় আদালত নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্যারিস্টার ফখরুল জানান, নিউ হোপ কেয়ার একটি বড় কেয়ার কোম্পানি। যেসব ভালনারেবল ব্যক্তিদের যতœ পরিষেবা প্রয়োজন, এটি তাদের সেবাদান করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনে সেটেল্ড নয় এমন কর্মীদের স্পন্সর করার অনুমতি দেয়া হয় এই কোম্পানিকে। হোম আফিসের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনকারী কর্মকর্তাকে ব্রিটেনে থাকা প্রয়োজন, যিনি মন্ত্রণালয়ের (এসএসএইচডি) নির্দেশনায় নিয়োজিত থাকেন।

ব্যারিস্টার ফখরুল মামলার রায় থেকে রায় থেকে উদ্ধৃত করেন করেন, হাইকোর্টের বিচারক অযৌক্তিক আচরণ, ভুল নির্দেশনা, পদ্ধতিগত অন্যায় এবং সার্বিক মূল্যায়নের মূল বিষয়গুলো পরীক্ষা করে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন। আদালতের এই রায়ের ফলে শুধু এই কোম্পানিতে শতাধিক কেয়ার কর্মীর ব্রিটেনে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি বহাল থাকবে।
ল’ম্যাটিকের পার্টনার ইমিগ্রেশন, ফ্যামিলি, হাউজিং, প্রোপার্টি, কমার্শিয়াল লিটিগেশন ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সলিসিটর ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন (সুমন) বলেন, অনেক মানুষ আইনি সহায়তা না নিয়ে জটিলতায় পড়েন। অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে অনেক বড় সমস্যার সহজ সমাধান পেতে পারেন। কেয়ার ভিসায় এসে যারা কাজ পাচ্ছেন না তাদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিসা প্রদানকারী বা এই ভিসায় আসা লোকজনকে যথেষ্ট নিয়মনীতি তথা কমপ্লায়েন্স মেনে চলতে হয়। যারাই এর ব্যত্যয় ঘটাবে তারা আইনের আওতায় আসবে। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সাংবাদিকসহ আমাদের সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement