সাংবাদিক নাদিম হত্যা মীমাংসা করবেন এমপি!
- জামালপুর প্রতিনিধি
- ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
জামিনে মুক্ত হয়ে সিনেমা স্টাইলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সভা করাছেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু।
উপজেলার কামালের বার্ত্তী বাজারে পথসভায় বক্তব্য দেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী বাজারে এই পথসভা করেন তিনি।
পথসভায় তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলাটি জামালপুর-১ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদ মীমাংসা করে দেবেন। কাজেই মামলায় আমার আর কোনো সমস্যা হবে না।
তবে এমপি নূর মোহাম্মদের দাবি, সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা মীমাংসার বিষয়ে কারো সাথে তার কখনো কোনো কথা হয়নি। তার নাম ভাঙিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এক বছর ২৩ দিন হাজতবাসের পর বুধবার বিকেলে হাইকোর্টের আদেশে জামালপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে বের হন চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু। এ দিন কারাগার থেকে বের হয়েই সিনেমা স্টাইলে বিশাল বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন করে নিজ গ্রামে ফেরেন।
একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কামালের বার্ত্তী বাজারে পথসভায় বাবু চেয়ারম্যান বলছেন, ‘গত বছর ১৭ জুন আমি আমার নানার বাড়ি পঞ্চগড় থেকে অ্যারেস্ট হয়েছিলাম। আপনারা জানেন, এই মামলায় অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। আল্লাহতায়ালাই জানেন কে মেরেছে। কে মেরে ফেলেছে। আমি আসলেই জনবান্ধব চেয়ারম্যান। আমার সাথে সাংবাদিকদের অনেক ভালো সম্পর্ক। এটা অনেক জায়গায় জানে। হঠাৎ কী কারণে, কী আমার পাপ ছিল; আমি জানি না। এই মামলায় আমাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এক নম্বর আসামি করা হলো। আমার ছেলে ঢাকায় লেখাপড়া করে। ঢাকার বারিধারা এলাকায় থাকা অবস্থায় ছেলেকেও দ্বিতীয় নাম্বর আসামি করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে আপনাদের কাছ থেকে দূরে ছিলাম। আমি এই এক বছরে আমার সাধুরপাড়ার অনেক ঘটনাই শুনেছি। অনেক ক্ষতিও হয়েছে। দিনে দুপুরে চুরি-ডাকাতি হয়েছে। আমার গরিব লোককে নির্যাতন করা হছে। টাকা-পয়সা খেয়েছে। অনেকের গরু বেচে টাকা নিয়েছে। ছাগল বেচে টাকা নিয়েছে। আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। আইনকে সারা জীবন শ্রদ্ধা করে যাব। আমার মামলায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টসহ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আমাকে জামিন দিয়েছে। আমাদের সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট ‘স্টে নো অর্ডার’ করে দিয়েছে। এই মামলায় আমার আর কোনো সমস্যা হবে না।’
এ সময় তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘এবারের মাননীয় এমপি নূর মোহাম্মদ সাহেব অত্যন্ত ভালো লোক। আমার সাথে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বাবু তুমি বের হয়ে আসো। এই মামলা তোমাকে মীমাংসা করে দেবো। আমার বন্ধুবর দুই-দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। উনি আমার অভিভাবক এবং শ্রদ্ধাভাজন লোক। উনিও আমাকে বলেছেন, আমার ইউনিয়নে যা যা প্রয়োজন, সবই করে দেবেন। আপনারা দোয়া করবেন, আমি এক-দেড় বছর আগে যে চেয়ারম্যান ছিলাম; সেই চেয়ারম্যান হিসেবে যেন চুরি-ডাকাতি, খুন-রাজাহানি বন্ধ করতে পারি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘জেলখানায় বাবু চেয়ারম্যানের সাথে আমার কোনো ধরনের কথা হয়নি। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলাটি মীমাংসা করার বিষয়ে কারো সাথে কোনো কথাও বলিনি। আমার নাম ভাঙিয়ে একটা মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে পৌর শহরের পাট হাটি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন। পরদিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ১৭ জুন বকশিগঞ্জ থানায় উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। বর্তমানে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে তদন্তাধীন রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা