১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট

৬ মাসে ১৬ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ

-

গত ছয় মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ১৬ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া তাদের ৩৩টি হামলার ঘটনায় ১৬ জন আহত ও ৩৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একজন বিজিবি সদস্য এবং একজন কিশোরও ছিলেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গতকাল এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস-এর তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশে গত ছয় মাসে ১০০৪টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯১ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০২৬ জন। যার অধিকাংশই নির্বাচনী সহিংসতা, আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল কেন্দ্রিক সংঘর্ষে এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহত ৯১ জনের মধ্যে ৭০ জনই সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার ও অন্তর্কোন্দলের অন্তত ৫০টি সহিংসতার ঘটনায় একজন নিহত ও কমপক্ষে ৪৮০ জন আহত হয়েছেন। তা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা কমপক্ষে ৭১৪ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়, তার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৫৭৪ জন।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, গত ৬ মাসে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা/হেফাজতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ১২টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ১২ জন। যাদের মধ্যে দুইজন তথাকথিত ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধের নামে, ৬ জন নির্যাতনে, হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৩ জন এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বান্দরবানে বিজিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে নেজাম উদ্দিন ও উখিয়াতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা আব্দুল মোনাফ মারা গেছেন। ঢাকায় বডি বিল্ডার ফারুক হোসেন ও রানা, গাজীপুর টংগী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর মারফ আহমেদ, সুনামগঞ্জে রমিজ মিয়া, রংপুরে বিএনপি নেতা মনোয়ারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামে রুবেল দে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠাকুরগাঁও-এ যুবদল নেতা আকরাম হোসেন ও যশোরে আফরোজা বেগম পুলিশ হেফাজতে এবং ভৈরবে র‌্যাব হেফাজতে সুরাইয়া বেগমের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে আলী কাচুয়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কারা হেফাজতে বিএনপির দুইজনসহ ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা কারা হেফাজতে মারা গেছেন তাদের মধ্যে কয়েদি ২৫ জন ও হাজতি ৩৩ জন। জেল কর্তৃপক্ষের দাবি হচ্ছে যারা কারাগারে মারা গেছেন তারা সবাই অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছেন কিন্তু নিহতদের পরিবারের অনেকেই নির্যাতন ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

জানুয়ারি থেকে জুন- এ ছয় মাসে ১২০টি হামলার ঘটনায় ২২৩ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। হামলায় নিহত হয়েছেন ২ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১২৮ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৩৯ জন, হুমকির শিকার হয়েছেন ৩০ জন ও গ্রেফতার তিনজন।
রিপোর্টে বলা হয়, গত ছয় মাসে ৯১৭ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৪৩ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ১৮৯ জন (৫৫%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু।
বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং দেশের সব সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement