০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পুঁজিবাজারে ফিরেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা

সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগে বাজার চাঙ্গা
-


দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজার একটি পতনের বৃত্তাকারে আটকে ছিল। বের হওয়ার চেষ্টা করেও টিকতে পারেনি। বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ। ইতিবাচক পথে ফেরায় দীর্ঘ সময় পর সূচকের সেঞ্চুরিতে ক্রেতাদের আধিপত্য এখন পুঁজিবাজারে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগ করার আইনগত সুযোগ আসছে- এমন খবরে বাজারের চাঙ্গাভাব অনেক বেশি গতিশীল হয়েছে। বিক্রির চাপ ২২ শতাংশের বিপরীতে ক্রেতার চাপ ছিল ৭৮ শতাংশ। ডিএসইর বাজারমূলধন একসপ্তাহে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ফিরেছে। তবে বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখিতার স্থায়িত্ব নিয়েও বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের মনে নানান প্রশ্ন। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিতে আবার কি সূচক খেইল হারাবে?

সাপ্তাহিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (পিই রেশিও) আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ২.৪৪ শতাংশ বা ০.২৫ পয়েন্ট। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন কমলেও গড় লেনদেন বেড়েছে। ব্যাংক হলি ডে থাকার কারণে লেনদেন একদিন বন্ধ ছিল। বিদায়ী সপ্তাহে বিদায়ী সপ্তাহে ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহে যেখানে ৭৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে দুই হাজার ৮০২ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৩৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তবে গড় লেনদেন বেড়েছে টাকায় ৯.৮৯ শতাংশ এবং শেয়ার লেনদেন বেড়েছে ২১.৪৭ শতাংশ। ডিএসইর বাজারমূলধন বেড়েছে ১.৪৪ শতাংশ। বর্তমানে ডিএসইর বাজারমূলধন ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বেড়েছে ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ডিএসই প্রধান সূচক-ডিএসইএক্স বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সেঞ্চুরি করাতে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে ছিল ৫ হাজার ৩৫৫ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ১৪২.১৫ পয়েন্ট। ডিএসই-৩০ সূচক বিদায়ী সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৫১ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ৯২৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ২৮.৭৭ পয়েন্ট। ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক-ডিএসইএস বিদায়ী সপ্তাহে হয়েছে ১ হাজার ২০৯ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ১৮৪ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ২৫.১৮ পয়েন্ট। আর এসএমই সূচক বেড়েছে ২৬.৩৫ পয়েন্ট। ডিএসইতে মোট ৩৯৩ কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছে ৩২৯টির, অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির এবং ৪০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৪৪৯ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার এবং এসএমইতে ৩৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানি হচ্ছে- আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, আরএসআরএম স্টিল, জেমিনি সি ফুড, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, দেশবন্ধু পলিমার, সাইফ পাওয়ারটেক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, নাভানা সিএনজি ও এডিএন টেলিকম।
চট্টগ্রাম স্টকে ছয় কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ২৯৩টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৬৬ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ২২৮ টাকায়। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩০৮ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৯৪ টাকার। ৩২৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বেড়েছে ২৩৭টির, কমেছে ৬৩টির এবং দর অপরিবর্তিত ২৩টির। বাজারমূলধনে সিএসইতে অংশীদারিত্ব ছিল এ শ্রেণীর কোম্পানির ৯৮.০১ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১.৬৪ শতাংশ, এন শ্রেণীর ০.২৯ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ০.০৫ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটালের বিশ্লেষণ হলো, শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক এই সপ্তাহে ২.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় অবস্থানে ছিল। ক্রেতারা বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা কিছু লাভজনক স্টকে বিনিয়োগ করে বাজার ঊর্ধ্বমুখী করতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি, প্রত্যাশিত আইনি সংস্কারের খবর, সরকারি কর্মচারীদের কয়েক দশক পরে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে, যা বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। গড় টার্নওভার ৯.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ২৫৬টি শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৮৮টি শেয়ার এর বাজারমূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজারমূল্যের ভিত্তিতে সবগুলো সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, যদি ক্রয়ের ধারা অব্যাহত থাকে তবে আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি মাঝারি পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement