ফিলিস্তিনি বন্দীদের অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০২ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০
গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের প্রধান সাত মাসের বেশি সময় বন্দী থাকার পর সোমবার মুক্তি পেয়েছেন। বন্দিদশায় ইসরাইলের ‘নির্যাতনের’ শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তার সাথে এ দিন ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এ দিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। অন্য দিকে গাজার রাফা অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরাইলে অস্ত্রসহায়তা পাঠানোর ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র তা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এএফপি, আলজাজিরা ও রয়টার্স।
একজন ইসরাইলি মন্ত্রী ও অবরুদ্ধ অঞ্চলের একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়াসহ ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তারা চিকিৎসার জন্য গাজায় ফিরে গেছেন। এ ছাড়া খান ইউনুসে অবস্থিত গাজা ইউরোপীয় হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের অর্থোপেডিক ইউনিটের প্রধান বাসাম মিকদাদও এ দিন মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন। মুক্তি পেয়ে সালমিয়া বলেন, আটকের সময় তাকে ‘কঠোর নির্যাতন’ করা হয়েছে। তার একটি আঙুল ভেঙে গেছে। বন্দীদের সবধরনের নির্যাতন করা হয় জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু বন্দী জিজ্ঞাসাবাদকেন্দ্রে মারা গেছে এবং খাবার ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
সালমিয়া বলেন, ‘দুই মাস ধরে কোনো বন্দী দিনে একটি রুটির বেশি খায়নি। আটকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অপমান করা হয়েছে।’ তবে হাসপাতাল প্রধান জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। ইসরাইলি বাহিনী আল-শিফায় বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছিল। তার একটি অভিযানে সালমিয়াকে আটক করা হয়েছিল। ৭ অক্টোবর গাজায় আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। এর পর থেকে ক্রমাগত অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটির অনেকাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।
দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালের একটি মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, সালমিয়া ও অন্যান্য মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী ইসরাইল থেকে গাজায় খান ইউনুসের পূর্বে ফিরে গেছেন। পাঁচজন বন্দীকে আল-আকসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং অন্যদের খান ইউনুসের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দেইর আল-বালার একজন এএফপি সংবাদদাতা কিছু বন্দীকে তাদের পরিবারের সাথে আবেগপূর্ণ পুনর্মিলনে দেখেছেন। এ দিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা মুক্তির বিষয়টি ‘যাচাই’ করছে। তবে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এক্সে এক পোস্টে সালমিয়াসহ অন্যদের সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মে মাসে ফিলিস্তিনি অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছিল, আল-শিফার একজন জ্যেষ্ঠ সার্জন আটক হওয়ার পর ইসরাইলি কারাগারে মারা গেছেন। তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই মৃত্যুর বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছিল।
গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকেই ইসরাইলে সবচেয়ে বড় হামলা
টাইমস অব ইসরাইল জানায়, ইসরাইলে সবচেয়ে বড় রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন ইসলামিক জিহাদ। সোমবার (১ জুলাই) ইসরাইলের সীমান্ত এলাকায় ওই হামলা চালায় দলটি। টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়, সোমবার ইসরাইলি সীমান্তে অন্তত ২০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন ইসলামিক জিহাদ। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি ছিল গত সাত মাসে তাদের সবচেয়ে বড় আঘাত। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতে, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনুস এলাকা থেকে রকেটগুলো নিক্ষেপ করা হয়। অথচ কয়েক দিন আগেই সেখানে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল ইসরাইলি বাহিনী। তারা আরো জানিয়েছে, আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিছু রকেটকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। অন্যগুলো দক্ষিণ ইসরাইলে আঘাত হেনেছে। সৈন্যরা আর্টিলারি দিয়ে লঞ্চ সাইটগুলোতে গোলাবর্ষণ করছিল। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইসরাইলে অস্ত্রসহায়তার স্থগিতাদেশ তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এ দিকে গাজার রাফা অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরাইলে অস্ত্রসহায়তা পাঠানোর ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, তা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তারা বলেছেন, শিগগিরই ইসরাইলকে এক হাজার ৮০০টি বোমার একটি চালান পাঠানো হবে। প্রতিটি বোমার ওজন ৫০০ পাউন্ড বা ২২৬ কিলোগ্রাম। গত এপ্রিলে এই চালানটির ওপরেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।
গত মার্চ মাসে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় সেনা অভিযান চালানোর পরিকল্পনা প্রকাশ করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তবে এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন ইসরাইলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরাইলের সেনা অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। বাইডেনের বক্তব্য ছিল, ইসরাইলি বাহিনী রাফায় অভিযান শুরু করলে বিপুল পরিমাণ প্রাণহানি ঘটবে। রাফায় অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে নেতানিয়াহুকে বেশ কয়েবার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে নেতানিয়াহু নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তার বক্তব্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি রাফা। তাই হামাসকে চিরতরে নিষ্ক্রিয় করতে হলে রাফায় অভিযান অপরিহার্য। এই নিয়ে বাইডেন প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে কয়েক সপ্তাহ টানাপড়েন চলার পর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ইসরাইলকে অস্ত্রসহায়তার একটি চালানে স্থগিতাদেশ দেন বাইডেন। এর মধ্যেই গত মে মাসের শুরু থেকে রাফায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কারণ প্রসঙ্গে এক্সিওসকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, হামাসের পাশাপাশি সম্প্রতি লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহর সাথেও তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ)। মূলত এ কারণেই ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ ফের ‘স্বাভাবিক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।
গাজায় আন্তর্জাতিক প্রশাসন মানবে না ফিলিস্তিন
গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক বাহিনী দ্বারা গঠিত প্রশাসনের ইসরাইলি প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট প্রশাসন। রোববার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন জানিয়েছে, তারা গাজায় কোনো আন্তর্জাতিক বাহিনীর প্রশাসন মেনে নেবে না।
প্রেসিডেন্টের সরকারি মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইন বলেছেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে কোনো বিদেশী উপস্থিতির বৈধতা নেই। শুধু ফিলিস্তিনের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কোন সরকার তাদেরকে শাসন করবে এবং কারা তাদের রাজনৈতিক বিষয়গুলো পরিচালনা করবে। ইসরাইলি গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে যে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় থাকবে যতক্ষণ না সেখানে আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজা শাসনের ভার নেবে। ইসরাইলি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই গাজার শাসন নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের ওই মুখপাত্র।
উপনিবেশ অবৈধ হলেও ইসরাইল তা গাজায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আবু রুদেইন। তিনি বলেন, ‘তারা সাধারণ জনগণকে বাস্তুচ্যুত এবং হত্যা করে সেখানে (গাজায়) দখলদারি স্থায়িত্বের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আমরা কোনোভাবেই আমাদের ভূখণ্ড বিদেশী শক্তির হাতে ছেড়ে দেবো না, সেটি পশ্চিমতীর হোক বা গাজা হোক। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দেয়া না দেয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, এটি সমগ্র আরবের একটি বিষয় বলে মনে করেন ফিলিস্তিনি ওই মুখপাত্র।’ গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।
ইসরাইলে আলট্রা অর্থডক্স ইহুদিদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ
দখলকৃত জেরুসালেমে আলট্রা অর্থডক্স ইহুদিদের সাথে আবারো পুলিশের ব্যাপক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে অর্থডক্স ইহুদিরা রাস্তায় নামলে এ সংঘর্ষ ঘটে। রোববার প্রতিবাদ মিছিলে হাজারও কট্টর অর্থডক্স অংশ নেন এবং নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় তাদের হাতে ছিল সরকারবিরোধী স্লোগানের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
বিক্ষোভ দমনে পানিকামান ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। উল্লেখ্য, কট্টর অর্থডক্স ইহুদিরা ধর্মপ্রাণ এবং ধর্মপ্রচারক হওয়ায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে যোগদান করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা