লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের তথ্য নেই দূতাবাসে
মিলিশিয়ারা ক্যাম্প থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছে মাফিয়াদের কাছে- মনির হোসেন
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
লিবিয়ার ত্রিপোলীসহ দেশেটির বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা দুই শতাধিক ডিটেনশন সেন্টারে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বন্দীর পর জিম্মি করে রাখা হয়। তবে এসব সেন্টারে কী পরিমাণ বাংলাদেশী মাসের পর মাস নির্যাতন সহ্য করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার সঠিক কোনো তথ্য দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নেই। তবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতা নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু বাংলাদেশীকে মুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। আটক বাংলাদেশীদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় এসে একপর্যায়ে মিলিশিয়া গ্রুপের হাতে আটক হচ্ছেন। এরপর তাদের সময় কাটছে দুর্বিষহভাবে।
সর্বশেষ ১০ জুন লিবিয়ার ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে আইওএম’র সহযোগিতায় বেনগাজি থেকে ১৬৩ জন বাংলাদেশীকে দেশে প্রত্যাবাসন করানো হয়। এদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটকে ছিলেন।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক, বিপদগ্রস্ত এবং পাচারের শিকার বাংলাদেশী নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দূতাবাস থেকে প্রচেষ্টা চালানো হয়। এই লক্ষ্যে লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং আইওএম-এর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় দূতাবাস থেকে নিয়মিত ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন শেষে আটক বাংলাদেশীদের শনাক্তের পর আউটপাস দেয়াসহ প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। একই সাথে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এসব বাংলাদেশীদের পর্যায়ক্রমে আইওএম-এর সহায়তায় দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গতকাল লিবিয়ার ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে শ্রম উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা এই মুহূর্ত পর্যন্ত ধারণা করছি লিবিয়াতে ২০ থেকে ২২ হাজার বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। তবে এদের মধ্যে কতজন মিলিশিয়াদের হাতে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন সে ব্যাপারে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের দূতাবাসের কাছে নেই। কেন নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত লিবিয়াতে দুটি প্রশাসন বিরাজমান। একটি ত্রিপোলী সরকার আর অপরটি বেনগাজির সরকার। আমাদের সব কার্যক্রম ত্রিপোলী সরকারের সাথে করতে হচ্ছে। তবে যদি কখনো বেনগাজিতে থাকা ডিটেনশন ক্যাম্প ভিজিট করার দরকার পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে দু’টি সরকারের কাছ থেকেই আমাদের অনুমোদন নিয়ে তারপরই যেতে হয়। ত্রিপোলী এবং বেনগাজিতে প্রায় দুই শতাধিক ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে বলে শুনেছি। এর মধ্যে বেনগাজিতে কতজন আর ত্রিপোলীর ডিটেনশন সেন্টারে কতজন বাংলাদেশী আটক আছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত আমরা ত্রিপোলীর তিনটি ডিটেনশন ক্যাম্প ভিজিট করতে যেতে পারি। মূল ডিটেনশন ক্যাম্পের নাম হচ্ছে তরিক সিক্কা। অপর দু’টি হচ্ছে আইন জারা ও তরিক মাতার। তিনি বলেন, সর্বশেষ বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন ক্যাম্পে দেড় শতাধিক বাংলাদেশী আটক রয়েছেন বলে জানি। আইওএম এর পক্ষ থেকে নতুন করে ফ্লাইট দিলে এই মাসেই আরেকটি ফ্লাইটে কিছু বাংলাদেশীর দেশে ফেরত যাওয়ার শিডিউল হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখনো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে দুবাইসহ বিভিন্ন পন্থায় বাংলাদেশীরা লিবিয়ায় যাচ্ছে। এই দেশটির বেশির ভাগ এলাকা এখনো নিরাপত্তা সঙ্কটে রয়েছে। মিলিশিয়ারা মূলত এখানকার ডিটেনশন সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের কিছু বাংলাদেশী দালালদের কারণে মিলিশিয়ারা এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। ডিটেনশন সেন্টার থেকেই আবার অনেক বন্দীকে মিলিশিয়ারা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। ওই সব ব্যক্তিরাই পরবর্তীতে সমুদ্রপথে গেমে যাওয়ার উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়। আমরা বাংলাদেশী অনেক দালালের নাম এরই মধ্যে পেয়েছি। কিন্তু তারা মাফিয়াদের নির্দেশে কাজ করায় অনেক চেষ্টার পর আমরা তাদের নিবৃত্ত করতে পারছি না। তবে যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চায় তাদের আমরা ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রম উইংয়ের একজন কর্মকর্তা গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কিছু শ্রমিক আসছে। তাদের আসার আগে আমরা সত্যায়ন অনুমোদন দিচ্ছি। এখন তারা আসার পর না থেকে সমুদ্রপথে পাড়ি জমাচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য নেই।
গতকাল লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করছিলেন কাজী আসিফ আহাম্মেদ (মিনিস্টার পলিটিক্যাল)। অপরদিকে শ্রম কাউন্সিলরের দায়িত্বে রয়েছেন গাজী মো: আসাদুজ্জামান কবীর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় তাদের দুইজনের সাথে এই প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে যোগাযোগের চেষ্টার পর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা