১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাজেটে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন

বিআইপির সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনাবিদরা
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিআইপির সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো দরকার। কৃষি খাতে বাজেটের বরাদ্দের বৃদ্ধি ইতিবাচক, কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা টেকসই না হওয়াতে ও ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দেশের স্থানিক পরিকল্পনা না থাকাতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এডিপির বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ সঠিকভাবে কাজে আসছে না। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংখ্যাগত পরিমাণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে বাজেটে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাজেটের স্থানিক বিশ্লেষণ ও জেলা বাজেট প্রণয়ন করা দরকার।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে রাজধানীর বাংলামোটরস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট : বিআইপির পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, বোর্ড সদস্য (একাডেমিক এফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, বোর্ড সদস্য (মেম্বারশিপ এফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ মো: ফাহিম আবেদীন এবং পরিকল্পনাবিদ আমানুর রহমান প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করতে শিক্ষায় বাজেটের ২০ শতাংশ ও স্বাস্থ্যে ১০ শতাংশ বরাদ্দ দরকার। কালো টাকায় ১৫ ভাগ ট্যাক্স প্রদানের সুযোগ দেবার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার যেমন লঙ্ঘিত হয়, ঠিক তেমনি জমি-ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। কালো টাকার প্রভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে, জলাশয়-জলাভূমি ধ্বংস করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠার প্রবণতা আরো বাড়বে। বিআইপির সভাপতি আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ না কমানো গেলে এই ভর্তুকি আমাদের অর্থনীতির উপর বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করে বিআইপি। একই সাথে বিদ্যুৎ খাতে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ প্রয়োজন। টেকসই নগরায়ন, গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন, বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা না করা গেলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি আমাদের অর্থনীতিতে অভিঘাত আরো বাড়াবে।
কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আমানুর রহমান বলেন, বাজেটে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। সবুজায়ন বাড়ানো আর নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা অত্যন্ত জরুরি।
বাজেটের বড় একটি অংশ যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোতে বরাদ্দ হলেও, স্থানিক পরিকল্পনার অভাবে এই অবকাঠামোগত উন্নয়নগুলো টেকসই করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বিআইপির ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে হলে সব সেক্টর নিয়ে সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা আবশ্যক। বিনোদন খাত ও চিকিৎসা খাতের মূল সুবিধাভোগী হলো মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষ। এগুলোতে কর বসানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ ঠিক করার সময় দেখা উচিত আউটপুট হিসাবে কি পাওয়া যাচ্ছে। সারা দেশের জন্য পরিকল্পনা থাকলে, প্রতিটা প্রজেক্টের যৌক্তিকতা বোঝা যেত। আমাদের সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়ন করতে হলে স্থানিক পরিকল্পনার এর কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement