১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ওষুধ সঙ্কটে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর

-

চরম ওষুধ সঙ্কটে পড়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্যসহ ১১টি দাতা সংস্থার বিনিয়োগ করা মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমানো এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি জায়গায় এসব ওষুধের মজুদ শূন্যতা বিরাজ করছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের এই সেবা খাতের অগ্রগতি। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে এই সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই ওষুধ পাওয়া যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী, মা ও শিশু স্বাস্থ্য ওষুধ সামগ্রীর মজুদ শূন্যের কোটায় রয়েছে। ফলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর জরুরি এ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত আট মাস যাবৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ওষুধ সামগ্রীর মজুদ শূন্যতার বিষয় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যথাযতভাবে জনসাধারণের মধ্যে ওষুধ সরবরাহ করতে না পারায় অধিদফতরের মাঠ কর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে। মানিকগঞ্জ জেলার এক কর্মকর্তা জানান, গত ৪ মাস ধরে কর্মীদের কাছে কোনো ইনজেকশন ও কনডম নেই। এ ছাড়া খাবার বড়ির মজুদও প্রায় শূন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ করা না গেলে, এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু এবং জনসংখ্যাও কাক্সিক্ষত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। অর্থাৎ টিএফআর বৃদ্ধি পাবে।

জরিপ অনুযায়ী সারা দেশে ৪০ শতাংশ দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। অধিদফতরের সাপ্লাই চেইন এর তথ্যমতে প্রতি মাসে খাবার বড়ির চাহিদা ৬ মিলিয়ন সাইকেলের বেশি। বর্তমান যে মজুদ আছে, তা দিয়ে ১.৩ মাস চলবে। এরই মধ্যে ২৮৭টি উপজেলায় মজুদ শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া ১২৭ উপজেলায় যেকোনো সময় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) মজুদ শূন্য হবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের তথ্য মতে, যে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মজুদ ৬ মাসের নিচে নামলেই বিক্ষিপ্তভাবে মজুদ শূন্যতা দেখা দেয়। প্রতি মাসে প্রায় ৯ লাখ ভায়াল এর ওপরে ইনজেকশনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সরকারের সফল একটি কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশে ও বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখবে সংশ্লিষ্টরা।
মজুদ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আবদুস সালাম খান বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় স্টক আউট ও বেশ কিছু জায়গায় স্টক শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্য আমাদের হাতে এসেছে। সরবরাহ শুরু হলে সঙ্কট কমতে শুরু করবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক ( উপকরণ ও সরবরাহ ) মতিউর রহমান বলেন, অধিদফতরের মজুদ সঙ্কটের সমাধান খুব শিগগিরই সমাধান হবে। এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে মালামাল পৌঁছে গেছে। আশা করি জুন মাসের মধ্যেই সঙ্কট কেটে যাবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন বলেন, ওষুধ সঙ্কট সমাধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কোথাও যাতে সঙ্কট না হয়, সে জন্য দ্রুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement