কবি ফররুখ আহমদেও জন্মবার্ষিকী আজ
- আযাদ আলাউদ্দীন বরিশাল
- ১০ জুন ২০২৪, ০১:০৫
আজ ১০ জুন রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদের ১০৬তম জন্মবার্ষিকী। কবি ফররুখ আহমদ তার জীবনের প্রথম দিকে জড়বাদী চিন্তাচেতনায় আচ্ছন্ন থাকলেও এক সময় পেয়ে যান ‘হেরার রাজ তোরণ’-এর পথ। তখন স্রষ্টার প্রতি তার ঈমান কিংবা বিশ্বাস এতটাই সুদৃঢ় হয় যে, জড়বাদী সভ্যতার কোনো কিছুর সাথেই আপস করেননি মহান এই কবি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?/ এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে? /সেতারা হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে? / তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে; / অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি....
এমনি অসংখ্য জনপ্রিয় এবং কালজয়ী কবিতার জনক কবি ফররুখ আহমদ। ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খানসাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ও রওশন আখতারের দ্বিতীয় ছেলে ফররুখ আহমদ।
১৯৩৭ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৩৯ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজে ১৯৩৯ সালে দর্শন বিষয়ে, পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ-তে ভর্তি হন। কিন্তু নানাবিধ কারণে এখানেই অ্যাকাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে তার। ১৯৪৩ সালে আইজি প্রিজন অফিস ও ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাই অফিসে স্বল্পকাল চাকরি করেন। এরপর সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা নিয়েই জীবনের বৃহত্তর সময় অতিবাহিত করেন ফররুখ আহমদ। তিনি রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা ও বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পী ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনে ইন্তেকাল করেন মানবতাবাদী এই কবি।
বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসস্বীকৃত একজন অসাধারণ জননন্দিত কবি ফররুখ আহমদ। স্বপ্নরাজ্যের সিন্দাবাদ, ঐতিহ্যের কবি ফররুখ আহমদ বাংলা-সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল তারকা। ছন্দের কবি, সঙ্গীতঝঙ্কারের কবি ফররুখ আহমদের কাব্যে ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বদেশ, সমকাল ফুটে উঠেছে সার্থকভাবে। অফুরান সৌন্দর্য, উদাস কল্পনা, রূঢ় বাস্তবতা, প্রদীপিত আদর্শ, সমুদ্রবিহার, রোমান্টিকতা, প্রেম প্রভৃতি তার কবিতার এক মৌলিক চরিত্র নির্মাণ করেছে। গানের ভুবনেও তার পদচারণা ছিল সর্বত্র। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে শিল্পী ও গীতিকার হিসেবে তার ছিল ব্যাপক খ্যাতি। শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, নাটক, অনুবাদসাহিত্যেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
তার প্রথম ও সেরা কাব্যগ্রন্থ সাত সাগরের মাঝি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া আজাদ কর পাকিস্তান (১৯৪৬), সিরাজুম মুনিরা (১৯৫২), নৌফেল ও হাতেম (১৯৬১), মুহূর্তের কবিতা (১৯৬৩), হাতেম তায়ী (১৯৬৬), পাখির বাসা (১৯৬৫), হরফের ছড়া (১৯৬৮), নতুন লেখা (১৯৬৯), ছড়ার আসর (১৯৭০), নয়া জামাত (১৯৫০), হে বন্য স্বপ্নেরা (১৯৭৬), ইকবালের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮০), চিড়িয়াখানা (১৯৮০), কাফেলা (১৯৮০), হাবেদা মরুর কাহিনী (১৯৮১), সিন্দাবাদ (১৯৮৩), কিস্সা কাহিনী (১৯৮৪), ফুলের জলসা (১৯৮৪), তসবির নামা (১৯৮৬), মাহফিল (১৯৮৭), ফররুখ আহমদের গল্প (১৯৯০), ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক কাব্য (১৯৯১), দিলরুবা (১৯৯৪) প্রভৃতি তার অমর সাহিত্যকীর্তি।
সব্যসাচী লেখক ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন- ‘ফররুখ আহমদ ছিলেন অফুরানভাবে সৃষ্টিশীল। তার সৃষ্টিধারায় কখনো ছেদ বা বিরতি পড়েনি। সব মিলিয়ে তার সাহিত্য-শস্যের পরিমাণ বিরাট।’
‘সওগাত’ পত্রিকায় ফররুখ সম্পর্কে আবু রুশদ লিখেছেন- ‘ফররুখ আহমদ রোমান্টিক কবি, অর্থাৎ তার দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তব-বোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তার কাব্যে সৌন্দর্যের জয়গান অকুণ্ঠ, সুদূরের প্রতি আকর্ষণও তার কাব্যের আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবুও তিনি নিঃসন্দেহে আধুনিক। তার একটি বলিষ্ঠ সজাগ তীক্ষ্ণ অনুভূতিশীল মন আছে যা সৌন্দর্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করার সাহস রাখে, কিন্তু রোমান্টিসিজমের বিপদ সম্বন্ধে যা সর্বদা সচেতন।’ এমনিভাবে প্রখ্যাত অনেক কবি- সাহিত্যিক ফররুখ আহমদ সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন।
ফররুখ আহমদের লেখা গান আজও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে নতুন প্রজম্মকে- ‘তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া, তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া’ এমনি অসংখ্য গান-কবিতা আর সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে যুগ থেকে যুগান্তরে বেঁচে থাকবেন কবি ফররুখ আহমদ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা