১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

বাজেট নিয়ে সিপিডি টিআইবি সুজন কী বললো মাথা ব্যথা নেই

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ওবায়দুল কাদের : নয়া দিগন্ত -


বরাবরের মতো প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যদিও তার যৌক্তিকতা নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছেন। এর জবাবে অর্থপাচার রোধ করার জন্যই প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।
দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাচারের অর্থ সবার অগোচরেই চলে যায়। এই পাচার থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে সেই অর্থও মূল ধারায় ব্যাংকে ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করছি। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করছি। ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। তিনি আরো বলেন, এই সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অন্যায় ও অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই। সেটা ফৌজদারি অপরাধ, সেটার বিচার প্রচলিত আইনেই হবে। অন্যের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের সব সম্পদের বিবরণ থাকে না। এসব ভুল সংশোধন করার সুযোগ থাকতে হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদ মূল ধারায় এনে ভবিষ্যতে তার উপর আয় থেকে সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চায়।

বাজেট পরবর্তী আওয়ামী লীগের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই গতকাল দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটকালে পরিমিত, বাস্তবসম্মত, গণমুখী ও সাহসী হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছে সরকারি দল। ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সঙ্কট দূর এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে উচ্চ গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিলেও আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রীদের ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ছুটোছুটি করার কোনো নজির নেই। বিএনপি আজকে বড় বড় কথা বলে, অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং দেশকে গিলে খাওয়ার কথা বলে। তাদের আমলে সর্বশেষ বাজেট ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার। এর পরও বাজেটের আগে সাইফুর রহমানকে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন ফোরামে প্যারিসের কনসোডিয়ামের বৈঠকে বাজেটের আগে দৌড়াতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। আমাদের কোনো অর্থমন্ত্রী ভিক্ষা করতে যায়নি।

কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক- সিপিডির এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করছি। ব্যাংকে আসলে ট্যাক্সের সুবিধা আরো বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন, মাছ ধরতে গেলে আধার (খাবার) দিতে হবে। সেই কথাই বাস্তব। এখন সিপিডি কী বললো, টিআইবি কী বললো, সুজন কী বললো; এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ওরা সবাই বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে। কথার সাথে তাদের বাস্তব কর্মকাণ্ডের মিল নেই। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিএনপির দণ্ডিত পলাতক নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে আরাম-আয়েশে দিনযাপন করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে।
খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের করা সমালোচনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অর্থনীতিবিদরাও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। বিএনপি মার্কা অর্থনীতিবিদ। এখন তারা মনের যে ক্ষোভ-অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার যে বেদনা, ক্ষমতায় আসলে যে সুযোগ-সুবিধা পেত সে স্বপ্ন তাদের ভেস্তে গেছে। সেটা হয়েছে তাদের ভুলের কারণে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে অনেক অর্থনীতিবিদ রয়েছেন তারা বলেছেন পরিমিত, সাহসী বাজেট হয়েছে। চ্যালেঞ্জ আছে, সেটা হচ্ছে বাস্তবায়ন। সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য সরকার এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি এ চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করতে পারব। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডলার সঙ্কট নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এ সঙ্কট মোকাবেলার স্কিম আছে। সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক প্রশস্ত করা হয়েছে।
এ সময় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিচার চললেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) যাদের দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, তাদের তালিকাটা দেন। আমরা দুদককে বলবো তদন্ত করতে।

‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জে (ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা) যারা ভোট দিয়েছেন, সেখানে নারীদের ২০০-৫০০ টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল’, শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছিলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এ প্রশ্নের কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement