ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী মিছিলে গুলি : ছাত্রলীগ কর্মী নিহত
রাজাপুর ও কলাপাড়ায় পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত ১৫০- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানের মিছিলে গুলি চালানোয় এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। ঝালকাঠির রাজাপুরে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপজেলা নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীর আনন্দমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়াশ রহমান এজাজ (২৩) নামে এক ছাত্রলীগের কর্মী নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাতে পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এজাজ কলেজপাড়া এলাকার আমিন মিয়ার ছেলে। জানা যায়, সন্ধ্যায় শহরের মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন বিজয়ী হওয়ার খবর পেয়ে তার সমর্থকরা বিজয়মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে গেলে ছাত্রলীগের কর্মী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আয়াশ রহমান এজাজের মাথায় গুলি ছোড়ে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় এজাজ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে মিছিলে থাকা তার সহপাঠীরা দ্রুত উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকায় নেয়ার সময় পথে তার মৃত্যু হয়। এ সময় জেলা সদর হাসপাতাল এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জমায়েত হয়। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের দিকে যায়।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়ের সাথে ছাত্রলীগের কর্মী এজাজের পূর্ববিরোধ ছিল। গত বুধবার সকালে ভোটকেন্দ্রে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সন্ধ্যায় বিজয়মিছিল চলাকালে জয় এজাজকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
নিহতের মামাতো ভাই জুনায়েদ চৌধুরী জানান, উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রার্থীর সমর্থক ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকার অনুসারী ছিলেন হাসান আল ফারাবী জয়। বিজয়মিছিল চলাকালে সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় তারা। স্থানীয় থানার ওসি মো: আসলাম হোসাইন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ছাত্রলীগের নেতা হাসান আল ফারাবী জয় গুলি করেছে বলে শুনেছি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই উপজেলা চেয়রম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় গত বুধবার গভীর রাতে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন। দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। পুলিশ জানায়, দোয়াত-কলম প্রতীকের সমর্থক গালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া পারভেজ বাদি হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপর দিকে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক জহির মোল্লা বাদি হয়ে নামধারী ৪০ জনসহ মোট ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
জানা গেছে, গত বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার পুটিয়াখালি বাজার এলাকায় প্রচার-প্রচারণার সময় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দুই দফায় হামলা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন ও বরিশাল শেবাচিমে একজনকে চিকিৎসা নেয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর উভয় পক্ষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর রাতে দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আফরোজা আক্তার লাইজু ও মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন মাহমুদ বাচ্চু সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপরে অতর্কিত হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের দাবি জানান। রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, উভয় পক্ষ থেকে দু’টি মামলা করেছে। আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান অব্যাহত আছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে কলাপাড়া পৌর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন খান আবাসিক হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন- মোকসেদ, সাইমুন ইসলাম, সাকিব ও বাইজিদ। তারা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদারের সমর্থক বলে জানা গেছে।
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব তালুকদার এ ঘটনার জন্য দোয়াত-কলম প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ আখতারুজ্জামানের ছেলে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান ওরফে শিমু মীরা এবং তার কর্মীদের দায়ী করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর বিজয়ী মোতালেব তালুকদারের এতিমখানা সড়ক এলাকার বাসভবনে গিয়ে তার কয়েকজন সমর্থক তার সাথে দেখা করেন। এরপর ওই সমর্থকরা নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন থেকে বের হয়ে যার যার বাড়িতে ফিরছিলেন। কলাপাড়া পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন চৌরাস্তা এলাকার খান আবাসিক হোটেলের সামনে পৌঁছালে সৈয়দ মশিউর রহমানের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের সবার হাতে রামদা, ছেনা, রডসহ লাঠিসোঁটা ছিল। মোতালেব তালুকদারের সমর্থকদের পথ আগলে রামদা-ছেনা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে মোকসেদ, সাইমুন, সাকিব ও বাইজিদ গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা চলে গেলে অর্তচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন। তবে এর মধ্যে গুরুতর জখম হওয়া মোকসেদ ও সাইমুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সাকিব ও বাইজিদকে কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এখন ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। থানায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা