১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ থাকলেও অগ্রগতি নেই

-


নির্মল পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ থাকলেও অগ্রগতি নেই। ফলে প্রতি বছর পরিবেশ নষ্টের মূল কারণ চিহ্নিত করার পরও কার্যকর কোনো ফলাফল আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়সম পরিকল্পনায় কখনো সফলতা আসে না। এ জন্য প্রয়োজন ধাপে ধাপে স্বল্প উদ্যোগ গ্রহণ। তাতে একটি শেষ করে অন্যটি হাতে নিলে তার সাফল্য সম্ভব। কিন্তু বছরের পর বছর একসাথে একগাদা পরিকল্পনার কারণে তার কোনোটিই বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিবেশ রক্ষার বদলে দিন দিন তা খারাপ হয়ে মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশ ধ্বংসের এ পর্যন্ত যতগুলো কারণ চিহ্নিত হয়েছে তার সমাধান প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দখলকৃত নদী উদ্ধার হয়নি। নদীর পানি দূষণের উৎস বন্ধ হয়নি। অব্যাহত রয়েছে সবুজায়ন, গাছপালা, খাল, বিল প্রকৃতির ধ্বংস। বন্ধ হয়নি ইটভাটা। মোট কথা পরিবেশ দূষণ যেসব কারণে হচ্ছে তার সব জানা থাকার পরও এসবের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে পরিবেশ রক্ষার বদলে ধ্বংস হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণ যে কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার প্রমাণ একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বাতাসে উচ্চমাত্রায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের অস্থিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে, আর্সেনিক, সিসা ও ক্যাডমিয়ামের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান। ঢাকার বাতাসে এসব বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
‘এলিমেন্টাল ক্যারেক্টারাইজেশন অব অ্যাম্বিয়েন্ট পার্টিকুলেট ম্যাটার ফর এ গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউটেড মনিটরিং নেটওয়ার্ক : মেথডোলজি অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন্স’ নামে এই গবেষণাটি গত ১০ মার্চ এসিএস ইএস অ্যান্ড টি এয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় ঢাকা শহরের বাতাসে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন আরেকটি উপাদান কোবাল্টের উচ্চ মাত্রায় উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বের ২৭টি স্থানে পরিচালিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি এবং ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প, কয়লাভিত্তিক ইটভাটা এবং যানবাহনগুলো রাসায়নিক উপাদানগুলোর উচ্চ ঘনত্বের জন্য দায়ী।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা-ই একমাত্র স্থান যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি মানদণ্ড ছাড়িয়েছে। যার ভেতর বসবাস করছে রাজধানীর মানুষ।
গবেষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। তিনি জানান, বাংলাদেশের পরিবেশে সিসার দূষণের কারণে বাতাসেও বিপজ্জনক মাত্রায় এর উপস্থিতি দেখা গেছে। এক সময় বাতাসে সিসার ঘনত্ব অনেক বেশি ছিল। তার পরে এটি অনেক হ্রাস পায়। আমরা সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ন্যানোগ্রাম পেতাম। কিন্তু এখন আবার এক হাজারেরও বেশি ন্যানোগ্রাম পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, সবুজায়ন যেখানে ২৫ শতাংশ এবং পর্যাপ্ত জলাধার নদী নালা খাল বিল থাকার কথা তা উজাড় করে অপরিকল্পিভাবে নতুন নতুন বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দূষণ মারত্মক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে ঢাকা স্থান পেয়েছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।
অন্য দিকে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দূষণ সব সময়ই উদ্বেগের। কিন্তু যেসব কারণে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে তার উৎস বন্ধ না হলে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে না। ফলে ধাপে ধাপে উদ্যোগ গ্রহণ না করে স্বল্প কার্যক্রম নিয়ে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা উচিত। তাতে করে এক সময় পরিবেশ রক্ষায় সফলতা আসবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোতালিব সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণে উপ-মহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের একটা ভূমিকা আছে। যদিও শীতকালে পরিবেশ দূষণে এর ভূমিকা থাকে মূল দূষণের প্রায় ৫০ শতাংশ। এর বাইরে কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহন ও ইটের ভাটা দূষণের অন্যতম কারণ। তবে পরিবেশ রক্ষায় সব মন্ত্রণালয়, সরকারি দফতর, অধিদফতর এবং বেসরকারি পর্যায় থেকেও কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
এ দিকে আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা।’
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে উপাসনাস্থল নিয়ে আপাতত নতুন মামলা করা যাবে না সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারকে যে বার্তা দিলো পশ্চিমতীরের ইসলামী আন্দোলন প্রধান বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চায় না : ড. মঈন খান রাজশাহীতে আরো ২ মামলায় গ্রেফতার সাবেক এমপি আসাদ স্কুলে ভর্তির লটারির ফল জানা যাবে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের রুখে দিতে হবে : জাহিদ হোসেন পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে ‘অপশক্তিকে রুখে দিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে’ বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আহ্বান ফেনীতে মুক্তিপণ না দেয়ায় শিশু খুন, গ্রেফতার ৩ কিশোর ড. ইউনূসের সাথে এসএফও প্রতিনিধিদলের বৈঠক

সকল