কুমিল্লা বিমানবন্দরে ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে ওড়ছে না বিমান
- হাবিবুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লা
- ০২ জুন ২০২৪, ০১:৩০
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাইরে দেশে যে কয়েকটি বিমানবন্দর রয়েছে তাদের মধ্যে কুমিল্লা ছিল অন্যতম। উদ্যোগের অভাবে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিমান ওড়ছে না এখানে। বিমান ওঠানামা না করলেও এটি এখনো চালু অবস্থাতেই আছে। প্রতিদিনই এ বন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করছে দেশ-বিদেশের কমপক্ষে ৪০টি এয়ার বাস, যা থেকে মাসে কমপক্ষে ২৫-৩০ লাখ টাকার রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। এখান থেকে আন্তর্জাতিক রুটে সবচেয়ে বেশি সিগন্যাল ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুট, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের বিমান। তা ছাড়াও আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমানও এ রুটে চলাচল করে।
নগরীর ঢুলিপাড়া, নেউরা ও রাজাপাড়া এলাকায় অবস্থিত এই বিমানবন্দরটির আয়তন ৭৭ একর। দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের শক্তি পিসিএন নষ্ট হয়ে গেছে। ধুলাবালু আর ঘাসের বিস্তার হয়েছে। ভেঙে গেছে পিচ ঢালাই। যতেœর অভাবে এগুলোর রুগ্ণ দশা। প্রশাসনিক শাখার সাইনবোর্ডটি না থাকলে বিমানবন্দরেরর অস্তিত্বও বোঝা কঠিন। বিমানবন্দরে কর্মরত রয়েছেন ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাত্রীদের জন্য আলাদা কক্ষও আছে। সব সুবিধা থাকার পরও শুধু উদ্যোগের অভাবে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিমান ওড়ছে না। এটি নিয়ে জোরালো কোনো পদক্ষেপও নেই।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি চালু করতে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। শুধু উদ্যোগ নিয়ে রানওয়ে মেরামত, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের কয়েকজন জনবল নিয়োগ করলেই এ বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের পাশাপাশি কলকাতা, আগরতলাসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব।
জানা যায়, যাত্রীসঙ্কটের কারণে ১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় দফা কুমিল্লা বিমানবন্দরের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। সেই থেকে আর চালু হয়নি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নানা দিক থেকে এগিয়েছে কুমিল্লা। ইপিজেড ও বিসিক শিল্পনগরীসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে শতাধিক কলকারখানা। যেখানে ব্যবসায়িক কাজে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আসা-যাওয়া করতে হয়। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এ জেলার অর্ধলাখের বেশি জনশক্তি। এখানে রয়েছে বার্ডসহ রাষ্ট্রীয় সবধরনের প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সড়কপথে কুমিল্লায় যাতায়াত করতে অনেকসময় যানজটের কবলে পড়তে হয়। অথচ বিমানপথে মাত্র ২৫ মিনিটে ঢাকা- কুমিল্লা যাতায়াত করা সম্ভব। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে; কুমিল্লা ছাড়াও উপকৃত হবেন চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের মানুষ।
কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত তিন দশকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ফেনী পর্যন্ত অসংখ্য মিলকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা। সড়কপথে চলাচল করতে তাদের অনেক সময়ের প্রয়োজন। বিমান যোগাযোগ থাকলে হয়তো এমনটি হতো না। বন্ধ বিমানবন্দরটি চালু হলে ইপিজেড ও বিসিক শিল্পনগরীতে বিদেশী বিনিয়োগ আরো বাড়বে।
কুমিল্লা গোমতী হাসপাতালের এমডি ডা: মুজিবুর রহমান বলেন, কুমিল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। এখানে সবকিছুই আছে। বন্ধ বিমানবন্দরটি চালু হলে আমাদের সমৃদ্ধি আরো বাড়বে।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্লাইট স্থগিত থাকলেও এটি এখনো সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সিগন্যাল ব্যবহার করে প্রতিদিনই রাজস্ব আয় হচ্ছে। আর ফ্লাইট চালু হলে কুমিল্লার গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের এমডি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইট চালু না থাকলেও প্রতিদিন এখান থেকে সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫-৪০টি বিমান। এখান থেকে সরকারের প্রতি বছর রাজস্ব আয় হয় দুই-আড়াই কোটি টাকা। বর্তমানে আমাদের এখানে জনবল রয়েছে ২৪ জন। রানওয়ে মেরামতসহ কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপনের পাশাপাশি আরো ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিলে যেকোনো সময় ফ্লাইট চালু করা সম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা