১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজীপুরে তাজউদ্দীন মেডিক্যালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু

-


গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকে পড়ে এক নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। লিফটের ভেতরে আটকে পড়া রোগী ও তার স্বজনদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানালেও লিফট অপারেটররা উদ্ধার না করে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে থাকার পর রোগীর লাশসহ তার স্বজনদের ওই লিফট থেকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল সকালে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
মারা যাওয়া রোগী মমতাজ বেগম (৫০) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন বিএসসির স্ত্রী।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা: কামরুল ইসলাম আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে কয়েক দিন আগে মমতাজের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তিনি গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই অবস্থায় তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে এলে তাকে ১১ তলার মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হার্টঅ্যাটাকের বিষয়টি ধরা পড়ে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রোগীকে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে রেফার্ড করা হয়। পরে তাকে ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নেয়ার জন্য লিফটে তোলা হলে অজ্ঞাত কারণে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। লিফটে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর লিফট থেকে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

নিহতের ভাগ্নে খন্দকার শাহাদত হোসেন সেলিম জানান, তার মামী মমতাজ বেগম শ্বাস কষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে রোববার সকাল ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের ৪র্থ তলায় থাকা কার্ডিওলজি বিভাগে ট্রান্সফার করেন। মামী হাঁটাচলা করতে পারলেও তখন তাকে দ্রুত হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার জন্য ট্রলিতে উঠানো হয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মমতাজ বেগম, তার ছেলে আব্দুল মান্নান ও মেয়ে শারমিনসহ আমরা হাসপাতালের ৩ নং লিফটে উঠি। কিন্তু লিফটি হাসপাতালের নবম ও ১০ তলার মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় লিফটি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যক্তিকে বারবার ফোন করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু বারবার ফোন করায় তারা বিরক্ত হয়ে আমাদের গালিগালাজ করেন। আটকে থাকার প্রায় ৩০ মিনিট পর এক পর্যায়ে কয়েকজন অপারেটর গিয়ে লিফটের দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। তারা আটকে পড়াদের উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে সেখান থেকে তারা চলে যায়। এমতাবস্থায় রোগী ছটফট করতে থাকলে আবারো অপারেটরদের ও জাতীয় জরুরিসেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করি।
নিহতের স্বামী অভিযোগ করে বলেন, লিফট নামার সময় আমি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে লিফটের বাইরে ছিলাম। লিফট আটকে গেলে সাথে সাথে আমি একবার তিন তলায় (প্রশাসনিক ভবন), একবার পাঁচ তলায়, একবার সাত তলায়, একবার ১১ তলায় কর্মকর্তার কাছে দৌড়াদৌড়ি করি রোগীকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করলেও তারা আমার আবেদনে সাড়া দেন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে আমার স্ত্রী হয়তো বেঁচে যেতো। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তিনি এ ঘটনার জন্য সঠিক তদন্ত করে বিচার দাবি করেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে হাসপাতালের ৯ম তলায় লিফটি থেমে গেলে সেখানেই লিফটের ভিতরে আটকা পড়েন রোগী মমতাজ ও তার কয়েক স্বজন। আটকে পড়া ওই লিফটের ভিতরে রোগী মমতাজ মারা গেছেন। এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement