১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সাভারে মানুষ কেনাবেচার হাটে ভীড় বাড়ছে

-

বাড়িওয়ালার বাসাভাড়া দিব। মুদিদোকানের টাকা দিতে হবে। চাল কিনতে হবে। আমাকে কাজে নিবে কে? একটা কাজ চাই। পেটের দায়ে কাজ করি। কাজে না এলে আমাদের খাওয়া দিবে কে। কথাগুলো বলেছেন মহান মে দিবসে গত বুধবার সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের সাভার সিটি সেন্টার আর মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সামনে মানুষ কেনাবেচার হাটে নারীশ্রমিক নুরজাহান (৩৫)। তিনি মাটিকাটার কাজ করেন। আসছেন নিজ জেলা নওগাঁ থেকে। বর্তমানে বাসাভাড়া নিয়ে থাকেন সাভার সদর ইউনিয়নের চাপাইন গ্রামে। তিনি জানান, বুধবার মে দিবস ছিল সরকারি বন্ধের দিন। আমরা তা নিয়ে কোনো কিছু ভাবি না। আমরা কাজের মানুষ। আমাদের কাজ করে খেতে হবে। প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ডে সাভার সিটি সেন্টার ও মাশরুম গেটে তাদের ভিড় করতে দেখা যায়। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, রোদে শুকাতে হয়। শুধু নুরজাহান নয়, শত শত-নারী-পুরুষ দিনমজুর প্রতিদিন কাজের আশায় কাকডাকা ভোরে উন্মুক্ত শ্রমবাজারে জড়ো হন। একদিনের জন্য কেনাবেচা হয় শ্রমিকরা এ দিনমজুর বাজারে। বিভিন্ন ঠিকাদার এ বাজার থেকে একদিনের জন্য দিনমজুর কিনে সাভারের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। আবার অনেক গৃহস্থ এবং ফ্ল্যাট মালিকরা মানুষ কেনাবেচার হাট থেকে দামদর ঠিক করে দিনমজুরদের নিয়ে যান। দিন শেষে যে টাকা পান তা দিয়ে সংসার চলে এ দিনমজুরদের। মহান মে দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস- আদালত, কলকারখানা ছুটি। আর দিনমজুর নারী-পুরুষ নি¤œ আয়ের এ শ্রমিকরা প্রতিদিনের ন্যায় মহান মে দিবসেও শ্রমবিক্রির জন্য জড়ো হয়েছেন উন্মুক্ত আকাশের নিচে। তাদের কেহ মে দিবস সম্পর্কে জানেন, আবার অনেকে কিছুই জানেন না।

সরেজমিন তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়- মাটিকাটার শ্রমিকদের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের মজুরির মূল্য পুরুষ-৮০০-৯০০ টাকা আর নারীশ্রমিকদের ৫০০-৬০০ টাকা। আর বিল্ডিংয়ের কাজে জুগালি পুরুষ-৬৫০ টাকা আর নারী ৪৫০ টাকা। তবে অনেক সময় ঠিকাদাররা মানুষ কেনার হাট থেকে তাদের কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে দেন। গত বুধবার মে দিবসের সকালে ওই স্থানে দেখা যায় হাতে টুকরি, কাঁধে কোদাল, দুপুরের খাবারের একটি থলে নিয়ে, আবার অনেকে খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন শতশত দিনমজুর। তাদের মধ্যে একজন ৬০ বছরের মোঃ খলিলুর রহমান। তিনি আসছেন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আড়ালিয়া থেকে। মে দিবস, এ দিবস সম্পর্কে খলিলুর রহমান কিছুই জানেন না। তিনি জানান- কামলার কোনো মে দিবস নেই। তিনি ক্ষেতে ধান কাটার জন্য সাভারে আসছেন। তাদের মজুরি ৯০০-৮০০ টাকা। কাজ না পেলে বাড়ি ফেরত যেতে হবে। তিনি জানান, আমাদের কাজ করে খেতে হয়। দাম এটাই, চাহিদা অনুযায়ী কম-বেশি হয়। খলিলুর রহমান নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, আমার বয়স বেশি বলে অনেকে আমাকে কাজে নেয়ার চায় না। যখন আমাকে কাজে নেয়া হয় তখন আমার কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পরবর্তীতে আবার নিতে আসে। আমি কাজে ফাঁকি দেই না। আমি অনেক আন্তরিকতার সাথে কাজ করি। কাজের সন্ধ্যানে নওগাঁ থেকে আসছেন যুবক মোরসালিন (২০)। তিনি জানান, তিনি এখনো বিবাহ করেননি। বাবা-মাকে খাওয়াতে কাজের সন্ধ্যানে ঢাকায় আসছেন। কাজ সহজে পাওয়া যায় না। কোনো দিন কাজ পেলেও দালালকে তার একটি অংশ দিতে হয়। আবার যে কন্ট্রাক্টর আমাদের বিভিন্ন জায়গায় মালিকের কাজে পাঠান, কন্ট্রাক্টর হাজিরার টাকার একটা অংশ নিয়ে যায়। তবে কোনো মালিক আমাদের হাজিরার টাকা কাটেন না, বা ঠকান না। এ ভাবেই চলছে আমাদের জীবন। তবে মালিকরা অনেক আন্তরিক এবং ভালো। সরেজমিন আরো দেখা যায়, মানুষ কেনার হাটে কোন লোক সকালে গেলেই নারী-পুরুষ শ্রমিকরা দৌড়ে আসেন ওই ব্যক্তির কাছে। তাদের ধারণা তাদের কাজে নেয়ার জন্য কেনার জন্য আসছেন। যদি শুনেন তারা এমনিতেই আসছেন শ্রমিক নিবেন না তখন তারা মন খারাপ করেন। দিনমজুর শ্রমিকরা জানান প্রতি জায়গায় আমাদের দুঃখ কষ্ট পোহাতে হয়। ভোর থেকে সকাল ১০টা, কোন দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত আমরা এখানে কাজের জন্য অপেক্ষা করি। কখন আমাদের কাজে যাওয়ার ডাক পড়বে। এ ভাবেই চলছে আমাদের জীবন। সবাই বলছে এখন নাকি অনেক গরম। কী গরম আর কী শীত, আমাদের রোদে শুকাতে হয় আর বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএসইতে মূল্যসূচক বাড়ল ১৪.৪৮ পয়েন্ট সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতনে ইরানি মুদ্রার মান রেকর্ড তলানিতে নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে কলেজেছাত্র আহত তারেক রহমান কবে ফিরবেন, জানালেন মির্জা ফখরুল কালিয়াকৈরে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে র‍্যাবের ১৬ সদস্য আটক : ডিজি মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সৈন্যসহ জেনারেল আটক শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’ পাওনা টাকা চাওয়ায় চা দোকানির হাত ঝলসে দেয়ার অভিযোগ হাসিনার বিবৃতিকে ভারত সমর্থন করে না : বিক্রম মিশ্রি

সকল