ইউক্রেন হারলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৬
রাশিয়ার সাথে সঙ্ঘাতে ইউক্রেন হেরে গেলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শুরু হয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা একটি বিদেশী সহায়তা বিল পাসের আহ্বান জানিয়ে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি। বিবিসি।
ইউক্রেনের এই প্রধানমন্ত্রী বিলটি পাসের বিষয়ে আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কিয়েভের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজটির অনুমোদন দেবেন। আগামী শনিবার মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এই বিলের ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরাইলের পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক সহায়তার বিষয়টিও ওই বিলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিবিসির সাথে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী শ্যামিহাল যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহায়তার বিষয়ে বলেন, এই অর্থ আমাদের গতকালই দরকার ছিল, আজ কিংবা আগামীকাল নয়।
তিনি বলেন, আমরা যদি এটা না পাই... তাহলে ইউক্রেনের পতন ঘটবে। আর তখন বিশ্ব, বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে...। আর এটা ঘটলে পুরো বিশ্বকে নিরাপত্তার একটি নতুন ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে।
অথবা বিশ্বজুড়ে অনেক সঙ্ঘাত দেখা দেবে। এই ধরনের অনেক যুদ্ধ বাধবে। দিনের শেষে এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াবে।
রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে সম্ভাব্য পরাজয় নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম যে এভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। কারণ এর আগে গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, সঙ্ঘাতে রাশিয়া যদি জিতে যায়, তাহলে তারা পরবর্তীতে পোল্যান্ডে আক্রমণ করবে; যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবে।
তবে পশ্চিমাদের এই ধরনের যুদ্ধভীতির দাবিকে নিয়ে উপহাস করেছেন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা। গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির পুতিন রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে একদিন হামলা চালাতে পারে পশ্চিমাদের এমন আশঙ্কাকে ‘পুরোপুরি বাজে কথা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভেতরে কোনো দেশে রাশিয়া কখনই হামলা চালায়নি। ন্যাটোর সামষ্টিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী, কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে তা জোটের সব সদস্যের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বুধবারের সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শ্যামিহালকে রিপাবলিকান হাউজের পররাষ্ট্রবিষয়ক চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককালের নিজ দলের সদস্যরা রাশিয়ার প্রচারণায় ‘সংক্রমিত’ হচ্ছেন, সাম্প্রতিক এমন এক দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বোঝা উচিত যে, মিথ্যা তথ্য এবং অপপ্রচার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একইভাবে ইউক্রেনেও ছড়ানো হচ্ছে।
চেরনিহিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত বেড়ে ১৮
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের শহর চেরনিহিভের সিটি সেন্টারে বুধবার রাশিয়ার তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ৭৮ জন। বৃহস্পতিবার নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর দেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটাই ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যা ইউক্রেন সরকারের মিত্র দেশগুলোর কাছে আকাশ সুরক্ষা সহায়তা বৃদ্ধির আবেদনকে আরো জোরাল করল।
রাশিয়ার হামলার পর বৃহস্পতিবার সকালে চেরনিহিভের সিটি সেন্টারে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ চাউস। বরাবরের মতো রাশিয়া বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। দুই বছর পেরিয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে সম্প্রতি বিবিসির একটি বিশ্লেষণাত্মক খবরে উঠে এসেছে।
চিকিৎসাকেন্দ্রে বারবার হামলা
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চিকিৎসাকেন্দ্রে বারবার হামলা করার অভিযোগ এনেছে রাশিয়া। একই সাথে চিকিৎসা কর্মীদের হত্যা করার অভিযোগও করেছে দেশটি। বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ক্রমাগত এই সব হামলা হচ্ছে। চিকিৎসা সুবিধায় হামলার সময়ে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
এ সময় পশ্চিমারা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই হামলার বিষয়ে দৃষ্টিনিবদ্ধ করছে না বলেও সমালোচনা করেছেন তিনি। রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। তবে রাশিয়ার এমন অভিযোগের বিষয়ে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। তবে উভয় পক্ষই এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছিল।
এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী বারবার দেশটির অধিকৃত চারটি অঞ্চলের চিকিৎসা সুবিধা এবং চিকিৎসকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হওয়া হামলার তারিখ এবং অবস্থানগুলো তালিকাভুক্ত করেছেন তিন।
জাখারোভা বলেছিলেন, একই তথ্য ডব্লিউএইচওকে দেয়া হয়েছিল। তবে সেগুলো নিয়ে সংস্থাটি কিছুই করেনি বলেও মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র। জাখারোভা বলেন, পশ্চিমের সরবরাহকৃত অস্ত্র দিয়ে কিইভে গোলাগুলির ঘটনায় আসল চিকিৎসকেরা মারা যাচ্ছেন। পশ্চিমা এবং পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ইউক্রেনের করা যেকোনো ধরনের অপরাধকে উপেক্ষা করে শুধু রাশিয়ার সমালোচনাই করতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা