১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মধ্যপ্রাচ্যসহ ১৫ দেশথেকে কমেছে রেমিট্যান্স

-

দেশের ৯৪ ভাগ রেমিট্যান্স আসে বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে। এর মধ্যে ১৫টি দেশ থেকেই রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেছে। আর দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্সের অবদান মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশের পাঁচটি থেকেই রেমিট্যান্স-প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে গত মাসের রেমিট্যান্স-প্রবাহের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ।

রেমিট্যান্স-প্রবাহের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এমনিতেই দেশে ডলার সঙ্কট রয়েছে। কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। আবার যে পরিমাণ রফতানি আয় হয় তার একটি বড় অংশই চলে যায় রফতানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে। কিন্তু দেশে প্রকৃতপক্ষে নিট বৈদেশিক মুদ্রা আসে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। আর এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সঙ্কট মেটাতে গত কয়েক মাস যাবৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটা নীরব রয়েছে। ঘোষিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আহরণ করছে। আর এ কারণেই গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৩ ও ২১৬ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজার তদারকি আগের মতো শীতল থাকলেও মার্চ মাসে রেমিট্যান্স বাড়েনি, বরং ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৬ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে মার্চে এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে প্রায় ৮ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে।

সাধারণত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে একটু বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা গেল গত মার্চে। চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এবারই ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কম রেমিট্যান্স এসেছে।

এ দিকে দেশভিত্তিক রেমিট্যান্স-প্রবাহের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে। কিন্তু গত মাসে এসব দেশের বেশির ভাগ থেকেই রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর মধ্যে আরব আমিরাত থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ৪৮ কোটি ডলার, যেখানে মার্চে এসেছে সাড়ে ৩৬ কোটি ডলার। সৌদি আরব থেকে ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যেখানে মার্চে এসেছে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এভাবে যুক্তরাজ্য, যক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, জর্দান, স্পেন, জার্মানি, জাপান, ব্রুনাই ও ইরাক থেকে ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, আশঙ্কার বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে অব্যাহতভাবে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাওয়া। কেননা, মধ্যপ্রাচ্য থেকেই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আসে। এখান থেকে কমে যাওয়ার অর্থ হলো সামগ্রিকভাবেই কমে যাওয়া। এ কারণে, গত ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেছে প্রায় ৮ শতাংশ।

এ দিকে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহের তুলনায় বহিঃপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এ রিজার্ভ একটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বশেষ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার ধার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে রেখেছে। এর পরেও আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ দিকে ব্যাংকগুলোর ঘোষিত দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এক ব্যাংকে থেকে আরেক ব্যাংকে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্ধারিত দরে ডলার সংস্থান করতে পারছেন না। এ কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ দিকে শিল্পের চাকা কোনো মতে সচল রাখতে হবে। তাই নির্ধারিত দরের চেয়ে ডলারের বাড়তি দাম দিয়েই চাহিদার অর্ধেকেরও কম কাঁচামাল আমদানি করার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর মতো বেশির ভাগই ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে খোদ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নেতৃবৃন্দ এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে এসে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement