ঘিওরের জামাই মেলায় মাছ ও মিষ্টি কেনার প্রতিযোগিতা
- আব্দুর রাজ্জাক ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯
মানিকগঞ্জের ঘিওরে শুরু হয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা গত রোববার উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাঙ্গালা স্কুল মাঠে মেলাটি শুরু হয়ে এটি গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে এ মেলা বসে। জামাই মেলা ছাড়াও এটি স্থানীয়ভাবে বউ মেলা, বাঙ্গালা মেলা, দোল মেলা বা মাছের মেলা নামেও পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ মেলার ঐতিহ্য প্রায় ৩০০ বছরের। স্থানীয় বাঙ্গালা মুক্তা সঙ্ঘের আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার সময় পুরো ইউনিয়নের মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। তারপর মেলা থেকে জামাইরা বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, পান সুপারি কিনে শ্বশুরবাড়ি যান। এরপর মেয়ে জামাইদের শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে দেয়া হয় বিভিন্ন আর্কষণীয় বিভিন্ন পুরস্কার। যেমন গরু, মহিষ, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, জামা-কাপড় ইত্যাদি।
দুই দিনব্যাপী এই মেলার দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় বউ মেলা। এদিন কেবল বিভিন্ন গ্রামের নববধূরা এবং স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়েরা তাদের স্বামীদের সাথে মেলায় আসেন।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ মানুষ দৌড়, ঘোড়দৌড়, সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতাসহ নানা ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতার জন্য এই মেলায় বাহারি রকমের ঘোড়া আসে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের দেয়া হয় পুরস্কার।
মাছ গলিতে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ত্রিশ কেজি ওজনের মাছের সমারোহ। অর্ধশত জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডালায় সাজিয়ে রেখেছেন। বিক্রিও হচ্ছে ব্যাপক। এর মধ্যে বিভিন্ন নদীর বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কাতল, পাঙ্গাস, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, চিতল ইত্যাদি। চাষের বিভিন্ন ছোট বড় আকারের মাছও পর্যাপ্ত পাওয়া যায়।
মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, বাঁশ-বেতসামগ্রী, লৌহজাত দ্রব্য, ফলমূল, নানা ধরনের মিষ্টি, বিন্নী খৈ, পানসুপারি, মৃৎশিল্প দোকানে থাকে উপচে পড়া ভিড়। মিষ্টির আকারও বেশ বড়, একেকটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত।
সাবেক ইউপি সদস্য চান মিয়া বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর আগে। প্রতি বছর এই মেলায় মেয়ে ও জামাতা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসি, তাদের উপঢৌকন দেই। এ বছর মেয়ের জামাইয়ের জন্য একটি গরু ক্রয় করেছি উপহার দেয়ার জন্য। এলাকার যার যার সাধ্যমতো মেয়ে জামাইদের উপহার দিয়ে থাকেন এই মেলা উপলক্ষে। এটিই আমাদের ঐতিহ্য।
স্ত্রী, শ্যালিকাদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা প্রবীণ জামাতা আ: সাত্তার (৬২) বলেন, আমি বাঙ্গালা গ্রামে ৪০ বছর আগে বিয়ে করার পর থেকে এই মেলায় আসি। অনেক আনন্দ হয়। এই মেলাটিই অনুষ্ঠিত হয় আমাদের (জামাইদের) জন্য। মেলা পরিচালনা কমিটির পরিচালক মো: কাউসার বলেন, এটি কেবল একটি মেলা নয়, সুদীর্ঘ ইতিহাস। মানুষের মিলনমেলা। পূর্ব পুরুষদের দীর্ঘদিনের এই রীতি ধরে রাখতে পেরে বাঙ্গালা গ্রামবাসী গর্বিত। এ মেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে, তার সঠিক দিনক্ষণ জানা যায়নি। বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, বাঙ্গালার মেলাটি ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে।
ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ও দর্শনার্থীরা আসেন। সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা