রাজনীতিতে টিকে থাকতে প্রভুদের পরামর্শে কাজ হবে না : প্রধানমন্ত্রী
- বাসস
- ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশী প্রভুদের পরামর্শ মেনে চললে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জাতীয় নির্বাচন (৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত) বানচাল করতে নেমেছিল। তাদের কিছু (বিদেশী) প্রভু আছে। তারা বাংলাদেশের জনগণকে চেনে না। প্রভুদের পরামর্শে বাংলাদেশে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।’
জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এই বিজয়ে শেখ হাসিনার টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। তাই দলটির কোনো বিদেশী প্রভু নেই।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমাদের কোনো (বিদেশী) প্রভু নেই। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের প্রভু ও শক্তি। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থাই আমাদের শক্তি।’
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চমৎকার এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী নির্বাচনের মধ্যে সদ্য অনুষ্ঠিত এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক।
তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে সবকিছু ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে তারা ভোটের দ্বার উন্মোচন করেছেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, দল মনোনীত অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন, যদিও তারা মনে করেছিলেন তারা জয়ী হবেন।
দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদের ফায়দা লোটার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে উল্লেখ করে-আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেটকে সম্মান দেখিয়ে, সবকিছু ভুলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুন।’
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, এটি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ফলাফল।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরো বলেন, তার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনে ১৩০ বছর বয়সী এক নারী নৌকায় ভোট দিয়েছেন।
বয়স্ক ওই নারীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শেষবারের মতো শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে চাই।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের অভিনন্দন
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলো এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ গতকাল মঙ্গলবার এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্রুনাই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিসর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন, মরক্কো, পাকিস্তানের দূতগণ প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। তারা নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, ব্রুনাই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিসর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তাদের নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অভিনন্দনবার্তা শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেন। এরপর, তারা পারস্পরিক স্বার্থ ও উন্নয়নের বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় করেছেন। রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা বাংলাদেশের সাথে নিজ নিজ দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে অব্যাহত সমর্থনের জন্য এসব বন্ধুপ্রতিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা আগামী দিনে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দলের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
তিনি গতকাল নগরীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পৃথক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে বনানী কবরস্থানে যান এবং বঙ্গমাতা ও ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা কবরে ফুলের পাপড়িও ছিটিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ফাতেহা পাঠ এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন। বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অন্য শহীদরা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা