০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

নারী ও শিশুদের জিঙ্কের ঘাটতি মারাত্মক পর্যায়ে

শিশুদের ৩২ ও নারীদের ৪৫ শতাংশই জিঙ্কের অভাবে ভুগছে
-


শিশু ও নারীদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি প্রকট হচ্ছে। দেশের ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুর এবং ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ নারীর মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। জিঙ্কের অভাবেই শিশুরা খাটো এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। পুষ্টি চালের মাধ্যমে এই অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। কারণ মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পুষ্টি চালে পাওয়া সম্ভব। তাই জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনপ্রিয় করতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বায়োফর্টিফাইড জিঙ্ক রাইস সম্প্রসারণের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল এম্পিরিক রিসার্চ লিমিটেড।


ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একসময় আমরা জাপানিদের খাটো বলতাম। এখন আমরা খাটো হয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। নারী ও শিশুদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে চলে গেছে। করোনার সময় আমরা বুঝেছি যে, জিঙ্ক কতটা প্রয়োজনীয়। সে সময় জিঙ্কের ঘাটতি সবার নজরে এসেছে। আমরা এতদিন পরিকল্পিতভাবে ভিটামিন, আয়রন ও আয়োডিন ঘাটতি নিয়ে কাজ করেছি। এখন জিঙ্কের ঘাটতি নিয়ে কাজ করতে চাই। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সুপরিকল্পিত টার্গেট নিতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে গেইন বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ বলেন, অনুপুষ্টির মধ্যে জিঙ্ক স্বল্পতা উল্লেখযোগ্য। সমস্যা সমাধানে জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। কৃষকদের এ ধান চাষে উৎসাহিতকরণে বিশেষ প্রণোদনা বা ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার বলেন, অনুপষ্টির মধ্যে জিঙ্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি গ্রোথ, ইমিউনিটি, কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতির জন্য খুবই দরকার হয়। জিঙ্কের অভাবে নারীদের গর্ভধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই জিঙ্কের অভাব পূরণে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল জনপ্রিয় করতে হবে।


কৃষি সচিব বলেন, আমরা লক্ষ করছি, দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। মানুষ আর আগের মতো কাজ করতে পারে না। খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম। অপুষ্টি দূরীকরণের জিঙ্ক রাইস এখন সময়ের দাবি। জিঙ্ক এতো গুরুত্বপূর্ণ অনুপুষ্টি। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এ ঘাটতি পূরণ করতেই হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন চালের মাধ্যমে কতটা সম্ভব সেটি দেখতে হবে। অন্যান্য ফসল জিঙ্ক-সমৃদ্ধ করা যায় কি না সে জন্যও গবেষণা দরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত বছর ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জিঙ্ক-সমৃদ্ধ ধানের চাষ হয়েছে। তবে জাতগুলোর চাল মোটা। মিলাররা আগ্রহী কম। জিঙ্ক চালের বাজারজাত কার্যক্রমও গতিশীল নয়। প্রতিটি দোকানে আলাদাভাবে জিঙ্ক চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা দরকার।


বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবির বলেন, মানুষের শরীরে জিঙ্কের যে চাহিদা, তার প্রায় ৭০ শতাংশ চালের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। আমাদের চালগুলোর গড় জিংকের পরিমাণ শতকরা ২৪ পিপিএম। শরীরের জন্য দৈনিক জিঙ্কের চাহিদা ১১ মিলিগ্রাম। এখন পর্যন্ত আমরা সাতটি জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। ব্রি ধান৮৪ একটি মিরাকেল জিঙ্ক-সমৃদ্ধ জাত। এখন হাই জিঙ্ক-সমৃদ্ধ চাল আনছে ব্রি। জিঙ্কের পরিমাণ হবে ৪৫ পিপিএম।
এ সময় এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারি বলেন, অনেক মেগাভ্যারাইটি রয়েছে, যেগুলোতে কৃষক ও মিলারদের আগ্রহ বেশি। সে জাতগুলোতে জিঙ্ক প্রবেশ করানো যায় কি না সেটি দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া একটি ভ্যারাইটি জনপ্রিয় করতে হলে অবশ্যই স্বল্পমেয়াদি হতে হবে।


গতকালের অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মমতাজ উদ্দিন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদ ও সদস্য পরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) মহাপরিচালক মির্জ্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) পরিচালক সুরজিত সাহা রায়, হারভেস্ট প্লাসের কান্ট্রি ম্যানেজার বি এম খায়রুল বাশার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মশিউর রহমান এবং বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement