আদমদীঘিতে ১৪৩ মেট্রিক টন গম নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড
- বগুড়া অফিস
- ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের ১৪৩ মেট্রিক টন গম নিয়ে গত শনিবার রাত পর্যন্ত তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় এমপি ও উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ওই পরিমাণ গম সান্তাহার সাইলো (কেন্দ্রীয় গম সংরক্ষণাগার) থেকে গত শনিবার রাতে উত্তোলন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
পরে বিক্রির উদ্দেশ্যে ছয়টি ট্রাকে করে গমগুলো স্থানীয় একটি স্বয়ংক্রিয় চালকলে রাখা হলে বিষয় জানাজানি হয়। পরে সান্তাহার টাউন ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে রাত ১২টা নাগাদ ইউএনও ট্রাকগুলো তার হেফাজতে নেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আদমদীঘি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্থানীয় এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার ও উপজেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দ থেকে কাবিখা প্রকল্পের ১৪৩ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। গম উত্তোলনের জন্য উপজেলা খাদ্য বিভাগ গত ২৯ ও ৩০ জুন বরাদ্দপত্র প্রদান করেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ অর্ধেকেরও কম হওয়ায় গম উত্তোলন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ৩০ জুনের মধ্যে গম উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি।
এ সুযোগে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ বিন রশিদকে না জানিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু গত শনিবার রাতে সান্তাহার সাইলোতে গিয়ে ৬টি ট্রাকে ১৪৩ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করেন। রাতে গম উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় হইচই শুরু হয়। এ অবস্থায় গম ভর্তি ট্রাকগুলোকে রাত ৯টায় সান্তাহার শহরের বৈশাখী স্বয়ংক্রিয় চালকলে নিয়ে রাখা হয়। ঘটনা জানার পর সান্তাহার টাউন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আনিসুর রহমান ও উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল ওয়াদুদ ঘটনাস্থলে যান এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ বিন রশিদ রাতেই ছয়টি গম ভর্তি ট্রাক তার হেফাজতে নেন।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ বিন রশিদ জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু তাকে না জানিয়ে প্রকল্পের সমুদয় গম উত্তোলন করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সব গম উত্তোলন করা সঠিক হয়নি। প্রকল্পের কাজ দেখার পর গম বরাদ্দ দেয়া হবে। এ কারণে উত্তোলন করা গম উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’ আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু জানান, ঘটনার দিন উত্তোলনের কথা ইউএনওকে জানানো না হলেও আগে জানানো হয়েছে। তারা বলেন, সাইলোতে বেশি ভিড়ের কারণে রাতে গম উত্তোলন করতে হয়েছে। এ ছাড়া বৈধ বরাদ্দপত্র নিয়ে গম উত্তোলন করা হয়েছে।
আদমদীঘি উপজেলার ১২টি প্রকল্পের কোনোটিতে ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলুর নাম না থাকার পরও কেন তারা দু’জন রাতে গম উত্তোলন করতে গিয়েছিলেন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।