২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতীয় কবিকে স্মরণ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন : নয়া দিগন্ত -

নিজের কবিতা ও গানসহ অগণিত সৃষ্টিকর্মে মানবতা ও সাম্যের কথা বলে গেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বাগ্রে। যার কারণে তার বসত মানুষের ভালোবাসায় আর শ্রদ্ধায়। কবির ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজারে ভক্ত-অনুরাগীদের ফুলেল শ্রদ্ধা মনে করিয়ে দেয় এ দেশের মানুষের হৃদয়ের ক্যানভাসে শিল্পের মতো মূর্ত হয়ে আছেন দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এ সময় ভক্ত-অনুরাগীদের অনেকে আবেগে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার কবির ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর সকালে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে এমন দৃশ্যই দেখা মেলে জাতীয় কবির মাজারে।
ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো: আখতারুজ্জামান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুলসঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, নজরুল চর্চা কেন্দ্র বাঁশরী, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, বিএনপি, বাসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানবতাবাদী কবি। আমরা আজ শপথ করব, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে কবির স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
ভিসি মো: আখতারুজ্জামান বলেন, কবির সাহিত্যকর্মের মধ্যে তার অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসাধারণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। এ বিষয়টি অনুধাবন করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। জাতীয় কবির সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
বাংলা একাডেমি : জাতীয় কবির ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।
বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষের এ আয়োজনে ‘নজরুলের বিদ্রোহ : রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মে’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক মোহীত উল আলম।
একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির সচিব এবং ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
মোহীত উল আলম বলেন, নজরুল গানের মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে রাজনৈতিক রূপ দিলেন। এখানে ব্যক্তি মানুষের উদ্বোধন কবি নজরুল করে গেছেন; বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন। এভাবে আমরা আমাদের জাতির পিতা ও জাতীয় কবিকে মেলাতে পারি। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রকৃত নজরুলকে চর্চা করতে পারিনি। আমরা যে নজরুলকে চর্চা করি, তা আমাদের তৈরি। তার মতো উদার চিন্তার মানুষ আমরা হতে পারিনি।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী পরিচয় পেয়েছেন কেবল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লেখার জন্য নয়, তিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিপক্ষে, সব ধরনের বৈষম্য অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। নজরুলের বিদ্রোহ ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন তানভীর আম সজীব।
তেওতা নজরুল-প্রমীলা মঞ্চে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে কবির স্মৃতিধন্য শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে স্থাপিত নজরুল-প্রমীলা মঞ্চে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কবিপতœী প্রমীলার জন্মভিটায় স্থাপিত কবির প্রতিকৃতিতে মঙ্গলবার সকালে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল সাহিত্যপ্রেমী স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব এ এফ এম হায়াতুল্লাহ প্রধান অতিথি ছিলেন।
নজরুল ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, সাহিত্যিক মীয়াজান কবির, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক বাবুল আকতার মঞ্জুর, সাইফুল ইসলাম খান, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, শিক্ষক মোজাম্মেল হক, ইকরাম হোসেন, অজয় চক্রবর্তী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
জানা গেছে, কবিপতœী প্রমীলার জন্মস্থান খ্যাত তেওতা গ্রামে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আবৃতি ও রচনা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
এতে বিশিষ্ট আবৃতিকার ড. শাহাদত হোসেন নিপু, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ইয়াসমীন মুস্তারী, চন্দা চক্রবর্তী, মুন্নি কাদের, রবীন্দ্র চক্রবর্তী, ঈমন হোসেনসহ স্থানীয় শিল্পীরা অংশ নেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement