০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

খেলাপি ঋণ পরিশোধ করছেন না ব্যবসায়ীরা

১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদায় মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা ; ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে ; আয় কমে যাওয়ার সাথে সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে
-

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে কমে যাচ্ছে আদায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, তিন মাসে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে আয়ের বড় একটি অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, ঋণ খেলাপিরা ঋণ আদায় না করায় ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন নিয়মিত যারা ঋণ পরিশোধ করছেন তারা। কারণ ব্যাংক থেকে একজন ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে ব্যবসায় করায় তার ব্যবসায়ী ব্যয় কমে যায়। অন্য দিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সুদে আসলে পরিশোধ করায় তুলনামূলকভাবে অন্য ব্যবসায়ীর ব্যবসায় ব্যয় বেড়ে যায়। এ অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা পেতে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন ওই সব গ্রাহক ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। এভাবেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ২০১৪ ও ১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়নের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়িক মন্দার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণ নবায়নের বড় ধরনের সুযোগ দেয়া হয়। তৎকালীন গভর্নর যেকোনো উপায়ে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেন। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ খেলাপি ঋণ বেশি এমন ব্যাংকগুলোকে ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো মতে ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ নবায়ন করার মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে ২০১৬ সালে ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে এ নির্দেশনা দেয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো শুক্রবার ছুটির দিনেও পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে ডাউন পেমেন্ট না নিয়েই বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে। ফলে ওই সময়ে খেলাপি ঋণ আগের তিন মাসের চেয়ে না বেড়ে বরং কমে যায়। একই সাথে বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেয়ার জন্য ঋণ পুনর্গঠনের নামে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। যেমন ৫০০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ খেলাপিদের মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে এবং এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণ খেলাপিদের মাত্র এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ১০০ টাকার খেলাপি ঋণকে নবায়ন করতে হলে গ্রাহককে ১৫ টাকা নগদে আগাম পরিশোধ করতে হবে। একই সাথে বিদ্যমান সুদ হারেও বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। এর ফলে ১২টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করে এ সুযোগ নিয়ে। একই সাথে খেলাপি ঋণ কমাতেও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সুদ মওকুফের হিড়িক চলে। এর পর থেকে একই তালে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র চার হাজার ২১০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকেরই প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আদায় হয়েছে সবচেয়ে কম। যেমন ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জুন শেষে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল সাড়ে ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৭০০ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে মাত্র ১ দশমিক ১৪ ভাগ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ৩৫১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। আদায়ের হার মাত্র ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২০০ কোটি টাকা। গত জুন প্রান্তিকে আদায়ের হার মাত্র ১ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের ১০ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৯১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২১৫ কোটি টাকা। গত জুন প্রান্তিকে আদায়ের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে সবচেয়ে কম আদায় হয়েছে বেসিক ব্যাংকের। ৯ হাজার ১৮ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় করতে পেরেছে ৩০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায়ের হার আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংকের ৫ হাজার ২০৯ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করতে পেরেছে ৪৯ কোটি টাকা। আদায়ের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৫৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করেছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, আদায়ের হার মাত্র ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মোটা দাগে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে প্রভিশন ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে নেয়া যায় না। এর ফলে ব্যাংকের সামগ্রিক আয় কমে যাচ্ছে। একই সাথে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। একই সাথে ঋণ আটকে যাওয়ায় এর বিপরীতে সংগৃহীত আমানত নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নতুন আমানত নিয়ে পুরনো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭ ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান শ্বশুর বাড়ি ঠাঁই হলো না শহীদ নূর আলমের স্ত্রী খাদিজার সংসদের মেয়াদ ৪ বছর করার প্রস্তাব গণঅধিকার পরিষদের ৫ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ হাসি ম্যানসিটির সিরাজগঞ্জে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো মুছা কক্সবাজারে গ্রেফতার নড়াইলে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ঝড়ো হাওয়ার আভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সঙ্কেত লেবানন থেকে ৪০৭ জনকে সরিয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ বৈরুতে ইসরাইলের ব্যাপক বিমান হামলা কিয়েভ বলছে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া ৯৩ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করেছে

সকল