২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`

ব্যবসায়ীরা অনেক সময় একপেশে কথা বলেন : অর্থ উপদেষ্টা

জুনেই বাজেট, রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭-৮% ঘরে নামবে
-


এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলার পাচ্ছেন না- ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ব্যবসায়ীদের আপনারা (সাংবাদিক) ভালো করে চেনেন, আমি তো আরো ভালো করে চিনি। তারা (ব্যবসায়ী) কিন্তু অনেক সময় একপেশে কথাবার্তা বলেন। এক গ্রুপ এসে বলবে স্যার আপনি তো এটার ওপর ট্যাক্স দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। আরেক গ্রুপ এসে বলবে স্যার আপনি কমাইয়েন না, যা দিয়েছেন ঠিকই আছে। সুতরাং আমাকে চিন্তাভাবনা করেই করতে হয়। বাজারে কিন্তু ডলারের সঙ্কট নেই। আমাদের রফতানি বেড়েছে। সেটা আমরা জানছি, কারণ আমাদের নগদ প্রণোদনা দিতে হয়।

গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা আগামী জুন মাসেই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। রমজান মাসকে সামনে রেখে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর আছে কি না-এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোজার সময় যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আছে, সেগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে। সেজন্য আমরা নিরলসভাবে চাল, ডাল, চিনির সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করছি। এখন তো চিনির দাম অনেকটাই সহনীয় অবস্থায় এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি বাকিগুলো যাতে সহনীয় দামে আসে। প্রথমত, সরবরাহটা নিশ্চিত করা। সরবরাহ নিশ্চিত করলে অনেক সময় সঠিক দামে ভোক্তারা পায় না। এখানে আবার মার্কেট কারসাজি আছে।
তিনি বলেন, আমি কয়েক দিন আগে বলেছি, মজুদ যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। দরকার হলে সেটা আমরা রিপিট করব। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ছাড়া অন্যান্য যে এজেন্সি আছে... সয়াবিন গুদামে, বেসমেন্টে রেখে দিয়েছে কি না! কিছুটা তারতম্য হতে পারে, কিন্তু কোনো সঙ্কট হওয়ার কথা না।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি হলেই জীবনযাপনের মান কমে যায়। এবার বড় একটি (পণ্যের) অংশ আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। এটা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভে প্রভাব ফেলেছে। রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিস্কুটের ওপর ভ্যাট কমানো হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন কেউ লেখে না যে বিস্কুট কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আরো দুয়েকটা পণ্যের কথা আমাকে বলেছে, রোজার সময় এ পণ্যগুলো একটু দরকার। আমি দেখবো এটা যতটা কমানো যায়।
বাজেট চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করেছি। বাজেট জুনের পরে কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে। কোনো সময়ই বাজেট অপেক্ষা করেনি। রিভাইস বাজেট তো আমাদের করতেই হবে। বাজেটটা আমরা জুনের মধ্যেই দেবো।
বাজেট প্রণয়নে প্রধান অংশীজনদের সাথে আলাপ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানিয়ে দেবো। তারা যদি মনে করে রিভাইজ করবে, তাহলে তারা রিভাইজ করবে। আমরা এখন আগের সরকারের বাজেট রিভাইজ করছি না?
অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, এখন কারেন্ট ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট পজিটিভ এসেছে। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, এটা ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার, এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যদিও এটা আমার বিষয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে কিছু অর্থ পাঠানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে কোথায় কিভাবে এ অর্থ খরচ হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করবেন কি না, এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা যদি আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, কারো মোটিভেটেড কোনো ইস্যুতে এটা ব্যবহার করে সেটা দেখার বিষয়। আমরা দেখবো ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মোটিভেশনাল কাজে টাকা না আসে।

এ দিকে গতকাল স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এক কার্গো এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানিসহ চারটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে জানানো হয়, আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহের জন্য গ্যাসের জরুরি প্রয়োজনে স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এক কার্গো এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এলএনজি কার্গো আমদানির বিষয়টি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, এটি চলতি বছরের নবম এলএনজি কার্গো আমদানি। সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি ‘মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডে’র লন্ডন শাখা এ কার্গো সরবরাহ করবে। এতে প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাস ১৬ দশমিক ৪৩ ডলার দরে ব্যয় হবে বাংলাদেশী ৭৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে দুটি পৃথক প্রস্তাবে মোট ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৬ দশমিক ৬৭ ডলার দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড’ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ ১২ হাজার টাকা।
অপর প্রস্তাবে প্রতি মেট্রিক টন ৪১০ দশমিক ৫০ ডলার দরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার কিনতে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বৈঠকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-৪ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের কোম্পনি ‘মেসার্স অ্যাস্টোন এগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসএ থেকে এ গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ২৯৫ দশমিক ২১ ডলার দরে বাংলাদেশী মুদ্রায় এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement