২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`
বিবিসির বিশ্লেষণ

ভারতের সাথে সম্পর্ক হ্রাসে বাংলাদেশকে আকৃষ্ট করেছে চীন

-


রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত ২২ সদস্যের একটি বাংলাদেশী প্রতিনিধিদল ১০ দিনের চীন সফর শুরু করেছে। ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করে বলছে যে, বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির এ সময় চীন কিছু প্রস্তাব দিচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে দিল্লির কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু দিল্লি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বেইজিংয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. আব্দুল মঈন খান বিবিসিকে বলেছেন, এটি মূলত একটি শুভেচ্ছা সফর, যার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং। এ সফর অনন্য কারণ চীন এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
প্রতিনিধি দলের অনেকেই বিএনপি এবং তার মিত্র বিভিন্ন সংগঠনের। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনেরও বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি রয়েছেন যারা গত বছরের আগস্টে হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু করে শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসঙ্ঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিদ্রোহের সময় হাসিনার সরকারের দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন।

তবে ভারত এখনো পর্যন্ত হাসিনাকে প্রত্যর্পণের কোনো লক্ষণ দেখায়নি। হাসিনার তার প্রায় ১৭ বছরের শাসনামলে দিল্লি এবং ঢাকা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, যাকে তার সমালোচকরা ব্যাপকভাবে ভারতপন্থী হিসেবে দেখেছিলেন, যদিও তিনি বেইজিংয়ের সাথে তার সম্পর্কের সাথেও ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন। হাসিনার পতনের পর, বেইজিং বাংলাদেশী নেতা, কর্মী এবং প্রতিনিধিদলের সাথে তার যোগাযোগ বাড়িয়েছে, যার মধ্যে ইসলামপন্থী দলগুলোর নেতারাও রয়েছেন।
এই সপ্তাহের সফরটি গত জানুয়ারিতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের শেষের দিকে বেইজিং বিএনপি প্রতিনিধিদলকে আতিথ্য দেয়ার পর, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি বিএনপির নেতাদের দ্বিতীয়বারের মতো চীন সফর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শূন্যতা এবং ভারতের প্রভাবের অনুপস্থিতির কারণে, বেইজিং প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে তার অবস্থান বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার (১৯ বিলিয়ন পাউন্ড)- যার বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চীন রফতানি করে। বাংলাদেশী সামরিক বাহিনী চীনা সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদের ওপরও ব্যাপকভাবে নির্ভর করে, বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের ৭০ ভাগেরও বেশি সরবরাহ আসে চীন থেকে।
বেইজিংয়ের প্রস্তাবের তুলনায়, গত ছয় মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভারতের যোগাযোগ খুবই সীমিত।

হাসিনাকে আতিথেয়তা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগে ডিসেম্বরে বিএনপি একটি বিক্ষোভ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টাও একই বিষয়ে দিল্লির সমালোচনা করেছেন। এই সমালোচনার পর দিল্লি থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত সপ্তাহে বলেন যে ‘আমাদের সাথে তারা কী ধরনের সম্পর্ক চায়’ সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের। তিনি বাংলাদেশী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের ভারতের সমালোচনাকে ‘একেবারে হাস্যকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইঙ্গিত দেয় যে দক্ষিণ এশীয় দেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং নেপালের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও দিল্লি এবং বেইজিং উভয়ের লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে। কারণ পরাশক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়াই করছে। বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র ফেলো এবং চীনা বিশ্লেষক ঝো বো বিবিসিকে বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি না যে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ দিল্লির প্রভাব বলয়ের অধীনে থাকা উচিত। এই মনোভাব ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।


আরো সংবাদ



premium cement